শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাদকে ভাসছে ঠাকুরগাঁও

সন্ধ্যা হলেই বিভিন্ন স্থানে বসে আড্ডা, থাকে মাদক সেবনের আয়োজন

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

‘বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে হঠাৎ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। নেশার টাকার জন্য প্রায়ই বাসায় ভাঙচুর করত। কখনো ছেলের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি।’ কথাগুলো বলছিলেন অসহায় এক বাবা। এ সময় হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি। ভক্তভোগী বাবা পেশায় কলেজ শিক্ষক। এ সমস্যা শুধু তার একার নয়, ঠাকুরগাঁও জেলার অনেক পরিবারের চিত্র এমন। সারেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে শেষ বিকাল পর্যন্ত শহরের যে চিত্র, তা অন্ধকার নামলেই পাল্টে যায়। সন্ধ্যার পর রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘর, টং দোকান, রিকশা গ্যারেজ, অফিসপাড়ার নিরিবিলি স্থান ও ফাঁকা জায়গায় উঠতি বয়সের তরুণ-যুবকদের আড্ডা অনেকটা অঘোষিত নিয়ম হয়ে গেছে। আড্ডায় থাকছে মাদক সেবনের আয়োজন। অনেকে আবার দিন-দুপুরে সেবন ও বিক্রি করছেন মাদকদ্রব্য। পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যমতে, মাদকাসক্তদের বয়স ১৮-৩০ বছর। ঠাকুরগাঁও শহর ছাড়িয়ে উপজেলা পর্যায়ে মাদক বহনে ব্যবহার করা হয় নারী ও শিশুদের। হোতারা থেকে যায় আড়ালে। মোবাইল কোর্ট ও পুলিশের অভিযানে বহনকারীরাই শুধু ধরা পড়ে। পীরগঞ্জে ফেনসিডিল ও ইয়াবা ব্যবসায়ী সুন্দরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা যায়, সুন্দরী ঠাকুরগাঁওয়ে মাদক বেচাকেনার একজন নারী গড ফাদার। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় প্রকাশ্যে সেলিম ওরফে কালু নামে একজনকে ফেনসিডিল বিক্রি করতে দেখা যায়। একাধিক সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ঢুকছে ইয়াবা। সীমান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কখনো গরুর পাল, কখনো তেলের কন্টেইনারে মাদক প্রবেশ করে। স্থানীয় অনেকে জানান, সীমান্তের দুই দিকে রাতভর চলে মাদক কেনাবেচা। বিজিবি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, সীমান্তে রাতদিন কড়া নজরদারি রয়েছে। জেলা গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক নবিউল ইসলাম বলেন, সীমান্তের তিন কিলোমিটারে মধ্যে পুলিশ প্রবেশ করতে পারে না। তার পরও পুলিশ মাদক ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সিভিল ড্রেসে কাজ করার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় সোর্সের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সূত্রমতে, ঠাকুরগাঁও সদর দফতরের ১৩ জন জনবলের মধ্যে আছেন মাত্র ছয়জন। এত কম জনবল নিয়ে একটি জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছি। জড়িতদের ধরে আদালতে পাঠানোর পর আইনের ফাঁক গলে তারা আবার বেরিয়ে আসছে। মাদকের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক তার কোনো ছাড় নেই। তিনি বলেন, অভিভাবকরা সচেতনা হলে মাদক থেকে অনেকটা রেহাই পাবে যুবক ও তরুণরা। ঠাকুরগাঁও-৫০ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর আহমেদ বলেন, প্রতিটি সীমান্তে আমাদের পর্যাপ্ত লোক আছে- যারা প্রতিনিয়ত নজরদারি করে থাকেন। আরও জোড়দার পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর