শিরোনাম
রবিবার, ৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

কাটা হচ্ছে অক্সিজেন ভান্ডার খ্যাত গোরস্থানের ৪৬৫ গাছ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কাটা হচ্ছে অক্সিজেন ভান্ডার খ্যাত গোরস্থানের ৪৬৫ গাছ

কাটার জন্য নাম্বারিং করা গাছ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আতা, সফেদা, জবা, সুপারি, শজিনা, মেহেদি, শিউলি, জিগা, খেজুর, কৃষ্ণচূড়া, অর্জুন, কাঠবাদাম, দেবদারু, শিমুল, আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, পলাশ, বকুল, নিমসহ বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ রয়েছে কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্থানে। গাছগুলো ১০ থেকে ৩০-৩৫ বছরের পুরনো। কোনো কোনোটির অবস্থান কবরের পাশে আবার কোনটা কবরের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে রয়েছে। এসব গাছ লাশ দাফন, জানাজা এবং কবর জিয়ারত করতে আসা মানুষকে ছায়া দিয়ে থাকে। পুরো গোরস্থানই যেন সবুজের সমারোহ। এ ছাড়া এসব গাছে শত শত পাখি বাসা বেঁধেছে। হঠাৎ করেই অক্সিজেন ভান্ডার খ্যাত প্রায় সাড়ে তিন একর এই গোরস্তানের উন্নয়নের নামে কুষ্টিয়া পৌরসভা ৪৬৫টি গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। কর্তনের তালিকায় রয়েছে মেহগনি ১৩৪, আম গাছ ৫৭, বকুল ১১৮, জাম ২৩, নিম ১৯, শিউলি ১৯, অর্জুন ১০, কাঁঠাল ৪, পেয়ারা ১৪, কৃষ্ণচূড়া ৭, কাঠবাদাম তিনটিসহ অন্য গাছ। গত ২৪ জানুয়ারি কুষ্টিয়া পৌর মেয়র আনোয়ার আলী পৌরসভার ২২৩/৪৮৭ নম্বর স্মারকে জেলা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কবির বরাবর পত্র পাঠান। এতে উল্লেখ করেন, পৌরসভার ১ নম্বর গোরস্থানে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রজাতির ৪৬৫টি গাছ কাটা জরুরি। লোকাল গভর্মেন্ট কভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রকল্পের আওতায় গোরস্থানের সার্বিক উন্নয়ন করা হবে। উল্লেখিত গাছগুলোর দর নির্ধারণ ও কর্তনের জন্য বিধিগত অনুমোদন প্রত্যয়ন প্রয়োজন। পৌর মেয়রের পাঠানো এ পত্র পাওয়ার পরদিন (২৫ জানুয়ারি) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কবির ‘বিষয়টি অতীব জরুরি’ উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জগতি এসএফ এনটিসি (বনপ্রহরী) জুয়েল আহমেদ বরাবর চিঠি পাঠান। শহরের ঠিক মাঝখানে প্রায় সাড়ে তিন একর জায়গাজুড়ে এই পৌর গোরস্থানের অবস্থান। এখানে একটি মসজিদ রয়েছে। গোরস্থানের এক পাশে টলিপাড়া। অন্যপাশে পেয়ারাতলা ও কালিশংকরপুর এলাকা। সামনে সড়কের পাশেই ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল। শহরের মধ্যে এক জায়গায় এত গাছ আর কোথাও নেই। আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের সবচেয়ে বড় অক্সিজেন ভান্ডার বলা যেতেই পারে এই গোরস্থানকে। গাছ কাটা প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত গোরস্থান করার লক্ষ্যে সংস্কার ও উন্নয়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ কাজের জন্য প্রায় ২ কোটি ২৩ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গোরস্তান ভরাটকরণ, রাস্তা নির্মাণ, ওজুর ব্যবস্থাসহ সর্বত্র পানির লাইন, বিদ্যুৎ, বৃক্ষ রোপণ, সামনের অংশে বাউন্ডারি ওয়াল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এই কাজের জন্য ৪৬৫টি গাছ চিহ্নিত করে কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গাছ কাটার আগে মেয়র কুষ্টিয়ার সুশীল সমাজ, মসজিদের ইমাম, জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কুষ্টিয়ার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কবির জানান, পৌর মেয়র গোরস্থানের ৪৬৫টি গাছ কাটার জন্য তাদের চিঠি পাঠিয়েছিল। তদন্তপূর্বক গাছের দর নির্ধারণ করে পৌরসভাকে পত্র দেওয়া হয়েছে। গাছ কাটার উদ্যোগের বিষয় জানাজানি হলে ফুঁসে ওঠে একাধিক সামাজিক, পরিবেশবাদী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনগুলো অবিলম্বে গোরস্তানের গাছ কাটা বন্ধে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে একাধিক সংগঠন কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্থানের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশও করেছে।

সর্বশেষ খবর