রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সড়কে মৃত্যুফাঁদ দুই পাশের মরা গাছ

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

সড়কে মৃত্যুফাঁদ দুই পাশের মরা গাছ

পথচারী-যানবাহনের ওপর প্রায়ই ভেঙে পড়ছে গাছের ডাল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দুর্ঘটনার আরেক নাম সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক। জেলা সদর থেকে চাঁপড়া পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের দুই পাশে সারি সারি রেইনট্রি (শিশু) গাছের শাখা-প্রশাখা ভেঙে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে পথচারী ও এলাকাবাসী। সড়কের দিকে তাকালে মনে হবে সাদা কাফন পরা এসব মরা গাছের ডাল ভেঙে এই বুঝি গায়ে পড়ল। এমনই আতঙ্ক নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুধু আতঙ্ক নয়, মরা এসব গাছের ডাল ভেঙে পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে প্রাণহানির ঝুঁকিও। ফলে জেলা সদরের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের এ রাস্তার দুই ধারে জেলা পরিষদের লাগানো এসব গাছ দ্রুত অপসারণ করা না হলে বড় ধরনের প্রাণহানির কবলে পড়বে সড়কে চলাচলরত মানুষ। এক সপ্তাহে এ সড়কে গাছের শুকিয়ে যাওয়া ডাল ভ্যানের ওপরে পড়ে কুল্যা এলাকার ভ্যানচালক খোকন ও সোরাপপুর গ্রামের বাবু আহত হন। এর আগে কোরবানির ঈদের দিন সন্ধ্যায় আশাশুনি উপজেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়কের কোমরপুর এলাকায় শিশু গাছের শুকনা ডাল পড়ে রক্তাক্ত আহত হন ব্রম্মরাজপুর গ্রামের ফারুক হোসেন। এ সময় তার মোটরসাইকেলটি দুমড়ে-মুচড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের দুই ধারে বিশাল আকৃতির শিশু গাছ (রেইনট্রি) মরে কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাছের শাখা-প্রশাখার ছাল ওঠে গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সারি সারি গাছগুলো সাদা কাফনের কাপড় পরে দাঁড়িয়ে আছে। ক্রমেই গাছগুলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে আকস্মিকভাবে ভেঙে পড়ছে। কী কারণে গাছগুলো মারা যাচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ বনগবেষণা ইনস্টিটিউটকে চিঠি দেওয়া হয়। তাদের একটি টিম এসে কাঠ ও পোকার নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ‘লাখ্যা’ নামের এক ধরনের পোকার আক্রমণে গাছগুলো মারা যাচ্ছে। রিপোর্ট এলে সঠিক কারণ জানা যাবে। স্থানীয়রা জানায়, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের লাগানো গাছগুলোর বয়স প্রায় ৪০ বছর। রোগ বা পোকার আক্রমণে গাছগুলোর মারা যাচ্ছে। একটু বাতাস হলেই ডাল ভেঙে পড়ে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিঘ্ন হচ্ছে চলাচল। দুই বছর আগে থেকে সড়কটির বেশকিছু স্থানের গাছ শুকিয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে শত শত গাছ মারা যায়। সামান্য ঝড় বৃষ্টিতেই গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। অনেক সময় ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ সব ধরনের যানবাহনে চলাচলকারী এলাকাবাসী ও পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হন। দীর্ঘদিন ধরে গাছগুলো অপসারণ দাবি করছে এলাকাবাসী। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পোকার আক্রমণে শত শত গাছ মারা গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো মার্কিং করা হয়েছে। শিগগিরই টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো অপসারণ করা হবে। স্থানীয় ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাতক্ষীরা থেকে আশাশুনি পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার সড়কটির দুই ধারে শত শত গাছ মরে গেছে বছর দুই আগে। প্রতিনিয়ত মরা গাছের ডাল-পালা ভেঙে ঘটছে দুর্ঘটনা। এ বর্ষা মৌসুমের মধ্যে গাছগুলো অপসারণ করা না হলে প্রাণহানির কবলে পড়তে পারে পথচারী ও এলাকাবাসী।

সর্বশেষ খবর