মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

অগ্রগতি নেই কুষ্টিয়ার প্রস্তাবিত স্থলবন্দরের

স্থলবন্দর হলে কলকাতার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রস্তাবিত প্রাগপুর স্থলবন্দর বাস্তবায়নের তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। স্থলবন্দর বাস্তবায়নের বিষয়টি শুধু সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা একাধিকবার এলাকা পরিদর্শন করে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশের পরও তা স্থলবন্দর বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগই গৃহীত হয়নি। অথচ সরকার নতুন করে যে ছয়টি স্থলবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে তার মধ্যে কুষ্টিয়ার প্রাগপুরের নাম সবার প্রথমে রয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে নানা তৎপরতার পরও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুরে প্রস্তাবিত স্থলবন্দর বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি না থাকায় চরম হতাশ এ অঞ্চলের মানুষ। সম্প্রতি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার স্থলবন্দর নির্ধারিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জানা যায়, অর্থনেতিক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত হওয়ায় ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১১ সালে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়। সে অনুযায়ী তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান কুষ্টিয়ায় সফরে এসে প্রাগপুর সীমান্তে স্থলবান্দর স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর প্রাগপুর সীমান্তে সরেজমিন এসে স্থলবন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই করে গেছেন নৌপরিহবন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলও। ভূমি জরিপসহ অন্যান্য কাজও হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও প্রাগপুরে স্থলবন্দর স্থাপনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, কুষ্টিয়া সীমান্তের প্রাগপুরে স্থলবন্দর হলে সড়ক পথে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে কলকাতার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে। ফলে পরিবহন ব্যয় ও সময় কম লাগবে। তাছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে প্রাগপুরের সঙ্গে ভারতের শিকারপুরের গুরুত্ব অপরিসীম। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, হাজার হাজার শরণার্থীর নিরাপদ আশ্রয়দানে শিকারপুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই প্রাগপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শিকারপুরের সঙ্গে যোগাযোগ এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন। তাই প্রাগপুর স্থলবন্দর বাস্তবায়ন হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক গুরুত্বের বিষয়টিও স্থান পাচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এপারে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর ওপারে ভারতের নদীয়া জেলার শিকারপুর। মাঝখানে সরু ফিতার মতো বয়ে চলেছে মাথাভাঙা নদী। প্রাগপুর থেকে লালনশাহ সেতু হয়ে জাতীয় মহাসড়ক মাত্র ২০ কিলোমিটার ও ওপারে পশ্চিমবঙ্গের শিকারপুরে ভারতের জাতীয় মহাসড়ক। ব্রিটিশ আমলে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর একটি সেতু ছিল। সে সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের যাতায়াতের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহার করা হতো প্রাগপুরকে। কালক্রমে ওই সেতু বিলীন হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য।

 তাই ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করতে ফের পথটি চালু করা দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাাগপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়নে অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রেও দুই দেশের সরকারের বড় বাজেটের অর্থ বরাদ্দের দরকার হবে না। মহাসড়ক কাছাকাছি হওয়ায় অনায়াসে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করার মতো অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। শুধু মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর ছোট্ট একটি ব্রিজ নির্মাণ করা দরকার। তাছাড়া বৈধ পথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হলে চোরাচালানসহ অবৈধ পথে পণ্য আনা-নেওয়াও বন্ধ হবে। ফলে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব পাবে সরকার। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মস্থান। তাই প্রস্তাবিত এ স্থলবন্দরটির দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চান এ অঞ্চলের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আতিয়ার রহমান আতিক বলেন, ভারতের শিকারপুর, জমশেদপুর, করিমপুরসহ আশপাশের অনেক স্থানের সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিজড়িত আছে। এখানে স্থলবন্দর হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মুক্তিযুদ্ধের এসব ইতিহাস সঠিকভাবে জানার সুযোগ পাবে। প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুকুল বিশ্বাস বলেন, প্রাগপুর থেকে লালনশাহ ও বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকা-কলকাতার সঙ্গে খুব কম খরচে ও দ্রুত সময়ে যোগাযোগ করা যাবে। তাছাড়া অন্যান্য জেলার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কম খরচে দ্রুত সময়ে পণ্য আনা-নেওয়া সহজ হবে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দল্লাহ বলেন, স্থলবন্দরটি বাস্তবায়ন হলে নতুন কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে পদ্মা নদীর ভাঙনে প্রায় নিঃস্ব একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে এ স্থলবন্দর। কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সাংসদ আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, বর্তমান সরকার ভারতের সঙ্গে নতুন করে যে ছয়টি স্থলবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে তার মধ্যে প্রাগপুর স্থলবন্দর অন্যতম। এটি বাস্তবায়ন হলে শুধু দৌলতপুরের অর্থনীতি নয় বরং জাতীয় অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করবে। তাছাড়া শিকারপুরের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতিজড়িত থাকায় ঐতিহাসিকভাবে এর যথেষ্ট গুরুত্বও রয়েছে। তবে স্থলবন্দর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর