মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

কাজে আসছে না দুই সেতু

♦ সংযোগ সড়কে ধস ♦ উঠতে হয় মই বেয়ে

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

কাজে আসছে না দুই সেতু

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি সেতু কাজে আসছে না। বন্যায় সংযোগ সড়কের মাটি সরে সেতু দুটি প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছেন মানুষ। একটি সেতুর এক পাশের মাটি পুরোপুরি সরে গিয়ে খাদ সৃষ্টি হয়েছে। বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা সেতুতে উঠছেন কাঠের মই বেয়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পনায় ত্রুটি ও অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় তাদের দীর্ঘদিনের ‘স্বপ্নের সেতু’ প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের আওতায় সেতুর পাইলিংয়ের বদলে বেজ ঢালাই দেওয়াসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। সেতু দুটির উভয় পাশে অ্যাপ্রোচ রোডও (সংযোগ সড়ক) তৈরি করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। নির্মাণ কাজ চলাকালে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ তুললেও ঠিকাদার-প্রকৌশলীরা তা আমলে নেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাতী গ্রামের হাজিরহাট এলাকার একটি খালে সেতু দুটি তৈরি করা হয়েছে। উত্তর-দক্ষিণের ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটি নির্মাণ কাজ পায় নেত্রকোনার ‘এ টি এল এন্টারপ্রাইজ’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্যয় ধরা হয় ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ওই ঠিকাদার স্থানীয় এক নেতার কাছে কাজটি বিক্রি করে দেন। অন্যদিকে ওই খালের পূর্ব-পশ্চিম দিকের ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৭০ লাখ টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে এ কাজ পায় আদিতমারীর ইব্রাহিম নামে একজন ঠিকাদার। তিনিও স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, দুটি সেতু নির্মাণেই হয়েছে অনিয়ম। সমন্বয়হীনতা, ভুল পরিকল্পনা ও আকারে ছোট হওয়ায় দেড় কোটি টাকার সেতু দুটি তাদের কাজে আসছে না। একটি সেতুর পূর্ব দিকে করা হয়নি সংযোগ সড়ক। সেখানে সামান্য যা মাটি ছিল তা সম্প্রতি বন্যায় ভেসে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে বাঁশ-কাঠ দিয়ে মই বানিয়ে সেতুতে উঠছেন। এ সেতুতে কোনো ধরনের যানবাহন পারাপারের সুযোগ নেই। সেতুটির পশ্চিম পাশের মাটিও কিছুটা সরে গেছে। অন্য সেতুটিরও প্রায় একই অবস্থা। দুই পাশের অনেক জায়গার মাটি সরে গেছে। লোকজন পারাপার করছেন পানি মাড়িয়ে। বন্যার পর পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জমান আমমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে সেতু করা হলে এই অবস্থা হতো না। এক্সপার্টদের সঙ্গে কথা বলে সেতু দুটির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। পরিকল্পনায় ত্রুটির কথা অস্বীকার করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সেতু নির্মাণ তদারকিতে থাকা কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘সমীক্ষা শেষেই সেতুটি করা হয়েছে’। পাইলিং করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ করে দেবেন ঠিকাদার’। সেতু নির্মাণে অনিয়ম হয়নি দাবি করে লালমনিরহাট বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন বলেন, তাদের সর্বোচ্চ বরাদ্দের সেতুর দৈর্ঘ্য ৩০ মিটার। ফলে পুরো খালজুড়ে তা করা সম্ভব হয়নি। তবে সড়ক নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর