বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বগুড়ায় ডেঙ্গু আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় ডেঙ্গু আতঙ্ক

বগুড়ায় ধীরে হলেও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়ছে। প্রকোপ বাড়ায় জেলা শহরের প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন ডেঙ্গু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মশক নিধনে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না থাকা, পৌর এলাকাগুলো পরিচ্ছন্ন না করা এবং আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সচেতনতার অভাবে পরিবারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। চলতি মাসেই বগুড়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৭১ জন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জেলায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত মোট ৮১ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৫৭ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। গতকাল বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (শজিমেক) ভর্তি রয়েছেন ১২ জন। এ ছাড়া একজন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ জুলাই হাফিজার রহমান (৭৫) ডেঙ্গু রোগে মারা যান। আক্রান্তদের মধ্যে ১ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ জন। এর মধ্যে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৭ জন, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৮ জন এবং বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ছয়জন। বগুড়ায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় দুটি পৃথক ইউনিট খোলা হয়েছে। বগুড়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ১০ শয্যা বিশিষ্ট ডেঙ্গু ইউনিট ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ২০ শয্যা বিশিষ্ট ডেঙ্গু ইউনিট করা হয়েছে। এর মধ্যে ছেলেদের জন্য ১০ শয্যা ও নারী রোগীদের জন্য রয়েছে ১০ শয্যা। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. জুলফিকার আলম জানান, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বিভিন্নভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন। বর্তমানে ১২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পৌর শহরের খান্দার এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান জানান, মাসে একবার মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয় না। দিনে রাতে মশার যন্ত্রণা আগের থেকে বেড়েছে। দিনে মশার অত্যাচার কম থাকলেও রাতে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা উঠানে বসা যায় না। অথচ নিয়মিত মশক নিধনে কর্মসূচি নিলে পৌর এলাকার বাসিন্দারা মশার অত্যাচার থেকে কিছুটা মুক্তি পেত। শহরের কলোনি এলাকার বাসিন্দরা জানান, পৌরসভার মশক নিধন অভিযান দৃশ্যমান নয়। এক দিন শুধু মাইকিং করা হয়েছে। শুধু মাইকিং করলেই হবে না। ওষুধ ছিটাতে হবে। পৌর এলাকার ড্রেনব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়নি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ডাবের খোল, পানি জমে থাকে। করতোয়া নদী অপরিষ্কার করে রাখা হয়েছে।

 যে কারণে পৌর এলাকায় মশা বাড়ছে। এক দিন ওষুধ ছিটিয়ে কাজ হবে না। নিয়মিত ওষুধ দিলে মশা কমে যাবে। জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিউল আজম জানান, বগুড়ায় দিন যাচ্ছে আর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। জুলাই মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত ৭১ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গুর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ইউএনও ও চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করে বলা হয়েছে প্রতিটি উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (শজিমেক) সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ জানান, বগুড়া শহর ও গ্রামের মানুষ যে কোনো জ্বর হলেই হাসপাতালে ছুটে আসছেন। তাদের ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের। এক সময় ডেঙ্গু রোগটি মৌসুমি রোগ ছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সারা বছরজুড়ে প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এডিশ মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগ হয়। বর্তমানে রোগটি দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ আর ভাইরাস শক্তিশালী হয়ে উঠছে। সচতেন থাকলে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব। পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তন ও ৪ লাখেরও বেশি জনগোষ্ঠীর এ পৌরসভায় বছরে ১৫০ লিটার মশার ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ২১টি ওয়ার্ডে এসব ওষুধ ছিটাতে ফগার মেশিন আছে ২৪টি। মশক নিধনের কাজে পৌরসভায় তিনজন স্থায়ী কর্মচারীও রয়েছেন। প্রতি মাসে একটি ওয়ার্ডে ওষুধ বরাদ্দ দেওয়া থাকে দেড় লিটার। আর এ ওষুধ প্রয়োগের জন্য ওয়ার্ড প্রতি বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০০ লিটার ডিজেল ও ২৫ লিটার অকটেন। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। ডেঙ্গু প্রকোপ নিয়ে শহরে মাইকিং করা হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্সিলরদের কাছে ওষুধ পাঠিয়েছি। তারা নিজ উদ্যোগে ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করছে। সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু জানান, আমাদের আগে থেকেই সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু বগুড়াতেও দেখা দিয়েছে। ড্রেন বা বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানি এডিস মশার প্রজননস্থল। এ জায়গাগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এসব বিষয়ে পৌরসভাকে এগিয়ে আসতে হবে, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর