নওগাঁয় খালকে পুকুর দেখিয়ে খনন এবং খননকৃত কোটি টাকার বালু টেন্ডার ছাড়াই বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এতে একদিকে যেমন অর্থ অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। জানা যায়, কয়েক দশক আগে কৃষকদের সুবিধার্থে সদর উপজেলার ত্রিমুহনী নামক স্থানে তুলসিগঙ্গা নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে ছোট যমুনার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এতে প্রায় এক কিলোমিটার নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে পরিণত হয় খালে। ধীরে ধীরে তুলসিগঙ্গা নদীর ওই অংশ মাটি ও বালু পরে ভরাট হয়ে যায়। একটি চক্র একাধিকবার সেখান থেকে বালু তোলার চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে চক্রের লোকজন এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জোগসাজশে খালটি পুকুর দেখিয়ে দুটি প্যাকেজে ৫১ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দে খননের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। একটি কাজ জামাল এন্টারপ্রাইজের পক্ষে স্থানীয় ঠিকাদার হালিম ও অন্যটি পায় রাজশাহীর কুশ ইন্টারপ্রাইজ। পরিকল্পিতভাবে বালু ও মাটি ব্যবসায়ী চক্র জামাল এন্টারপ্রাইজের প্যাকেজটি সাব কন্টাক্টের মাধ্যমে খননের নামে প্রকাশ্যে বালু-মাটি বিক্রি শুরু করে। সিডিউল না মেনে ৬৮ ফিট প্রস্থের জায়গায় ১২০ ফিট এবং গভীরতায় সাড়ে ৭ ফিটের জায়গায় দ্বিগুণ করে খনন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সচেতনমহল একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে জানালে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। খননের নামে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অনেকে মনে করেন রাষ্ট্রের সম্পদ হরিলুটের এটি নতুন কৌশল। সরকারি লাইসেন্সধারী এক মাটি-বালু ব্যবসায়ী বলেন, ওই খাল খননে কোনো অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন ছিল না। খালে যে মাটি-বালু আছে তা পাড় বাধা শর্তে দিলেও প্রতি সেপটি ২ টাকা রাজস্ব দিয়ে ক্রয় করতাম। এই খাল খননে শুধু লুট না রাষ্ট্রের টাকা হরিলুট হচ্ছে। তীলকপুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, ওই খাল খননে ৬০-৭০ লাখ টাকার মাটি ও বালু বের হবে। যেখান থেকে সরকার রাজস্ব পেত। জামাল এন্টারপ্রাইজের সাব-ঠিকাদার বাপ্পি হোসেন বলেন, খাল খননে সিডিউলে ৬৮ ফিট প্রস্থ উল্লেখ আছে কিন্তু এভাবে খনন করলে মাছ চাষ হবে না। সেজন্য আমরা ১২০ ফিট প্রস্থ করে খনন করছি। এতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে। ওই টাকা অফিস দেবে না। সে কারণে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রিজিয়ন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান বলেন, ইউএনওর সুপারিশে খালটি পুকুর দেখিয়ে খনন করা হচ্ছে। ঠিকাদারকে বলে দেওয়া হয়েছে মাটি বিক্রি করা যাবে না। তারপরও মাটি বা বালু বিক্রি করলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সদ্য বিদায়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, মাটি এবং বালু অবৈধভাবে বিক্রি করা যাবে না। আমি বিষয়টি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও এডিসি (রাজস্ব)-কে বিষয়টি জানাব।