শিরোনাম
সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণে গচ্চা কোটি কোটি টাকা

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণে গচ্চা কোটি কোটি টাকা

মাদারীপুরে ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ‘অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। সরেজমিন মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন অসংখ্যা সেতু দেখা গেছে। তবে এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে জেলা এলজিইডি ও মাদারীপুর সদর উপজেলা এলজিইডিতে তথ্য অধিকার আইনে দরখাস্ত করলেও তথ্য পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া- শ্রীনদী সড়কের মিঠাপুর এলাকার একটি খালের ওপর কোটি টাকা ব্যয় করে এলজিইডির থেকে একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। অথচ সেতুর সামনে নেই কোনো সড়ক। নেই বাড়িঘরও। একই রকম চিত্র দেখা গেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার বাংলাবাজার-কালিকাপুর সড়কের পাঁচখোলা এলাকার কাদের মাদবরের বাড়ির সামনে। সেখানেও একটি সেতু নির্মাণাধীন রয়েছে। অথচ সেতুর সামনে নেই কোনো সড়ক। এসব সেতুর নির্মাণ ব্যয় দেড় কোটি থেকে দুই কোটি টাকা। এদিকে সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের মধ্যচর গ্রামে খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সেতুর আশপাশে সড়ক নেই, বাড়িঘরও নেই, অথচ সেখানে সেতু নির্মাণ করে সরকারি অর্থ অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি উপজেলা প্রকৌশলীর স্থান নির্বাচনে ভুলের কারণে লাখ লাখ টাকা খরচ করে তৈরি  সেতুটি জনগণের কাজে আসছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে প্রকৌশলীর মাধ্যমে স্থান নির্বাচন করে সেই স্থাপনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত তথ্যসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। অনুমোদন হলে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এরপর ওই স্থাপনার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। খোয়াজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দবির মালত বলেন, ‘আমাদের এলাকায় অনেক স্থানে সেতু দরকার কিন্তু নেই। একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে বাড়িঘর  নেই, রাস্তাঘাটও নেই। সেতু নির্মাণ হবে সেটাও আমরা জানতাম না।’ একই মন্তব্য করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল মোল্লা বলেন, ‘ওখানে সেতু নির্মাণের বিষয়টি আমরা জানতাম না। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনুদ্দিন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘কাজে আসবে না এমন স্থানে সেতু নির্মাণ করার কথা নয়। সেতু নির্মাণের আগে স্থান নির্বাচন করা হয়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।  সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের উত্তর কাউয়া কুড়ি গ্রামের একটি খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ কাজ করছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে। সেই সেতুর সামনে নেই রাস্তা ঘাট, বাড়ি ঘর। অথচ নির্মাণ ব্যয় হবে অর্ধকোটি টাকারও বেশি। সরেজমিন ঘুরে এরকম অসংখ্য সেতু দেখা গেছে মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। এলাকার লোকজন এসব সেতুকে অপ্রয়োজনীয় অখ্যায়িত করেছেন। স্থানীয়দের দাবি, এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে।

লাভবান হচ্ছে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানে জানা গেছে সম্প্রতি মাদারীপুর এলজিইডির আওতায় প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে। এই কাজের অধিকাংশই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ মাদারীপুরের তিন প্রভাবশালী ঠিকাদার ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে। এসব কাজে জনগণের চেয়ে ঠিকাদাররাই বেশি লাভবান হবে। এই কাজের আওতায় যেসব সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, তার অনেক সেতুই অপ্রয়োজনীয়। মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, আমরা বিভিন্ন এলাকায় দেখেছি সেতু দরকার অথচ সেতু হচ্ছে না। আবার অনেক এলাকায় দেখেছি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে অথচ এর আশপাশে বাড়িঘর নেই, রাস্তাঘাট নেই। এসব সেতু নির্মাণের কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে। এসব অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি। এ ব্যাপারে মাদারীপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফ আলী খান বলেন, ২০০ কোটি টাকা কাজ ভাগবাটোয়ার যেই ঘটনা বলছেন সেটা আমি এখানে যোগদান করার আগে ঘটেছে। বিস্তারিত জানা নেই। অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণের অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর