সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ল্যাম্পি আক্রান্ত গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে খামারি ও কৃষক

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

ল্যাম্পি আক্রান্ত গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে খামারি ও কৃষক

জয়পুরহাটের কালাইয়ে এক মাসে ছোট-বড় মিলে ৫ শতাধিক গরু ও ছাগলের শরীরে দেখা দিয়েছে ল্যাম্পি স্কিন রোগ। ইতোমধ্যে মারাও গেছে অর্ধশতাধিক গরু ও ছাগল। এ রোগ নির্মূলে কোনো চিকিৎসাও মিলছে না পশু হাসপাতালে। অফিস সময়ে চিকিৎসকদের পশু হাসপাতালে পাওয়া না গেলেও টাকার বিনিময়ে ঠিকই বাইরে গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ খামারি ও কৃষকদের। এসব কারণে স্থানীয় পশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের ওপর আস্তা হারিয়ে খামারি ও কৃষকরা গরু বাঁচাতে ছুটছেন স্থানীয় হোমিও হলগুলোতে। নিজেরা না খেয়ে গরু ও ছাগল বাঁচাতে বাধ্য হয়েই তারা বেছে নিয়েছেন এ পথ। অল্প খরচে হোমিও চিকিৎসা নিয়ে ইতোমধ্যে ভালোও হয়েছে অনেক গরু-ছাগল। হোমিও হলগুলোতে এক সপ্তাহ ধরে খামারি ও কৃষকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের এমন সুযোগ কাজে লাগিয়ে এলাকার কিছু হাতুড়ি পশু চিকিৎসক খামারি ও কৃষকদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। যেমন তেমন চিকিৎসা দিয়ে ভিজিট বাবদ গুনতে হচ্ছে ৫০০-১০০০ টাকা। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে খামারি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ রোগের কারণে প্রতিদিন আক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরু-ছাগলের শরীরে বড় বড় চাকা ও ঘায়ের মতো ক্ষত দেখা দিয়েছে। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্ধশতাধিক গরু-ছাগল মারাও গেছে। বর্তমানে এলাকার প্রত্যকের বাড়িতে এ রোগে আক্রান্ত গরু-ছাগল আছে। পশু হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের সময়মতো পাওয়াও যাচ্ছে না। টাকার বিনিময়ে তারা অফিস সময়ে বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করছেন অথচ তাদের গুরুত্ব দিচ্ছেন না। গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়ে খামারি ও কৃষকরা স্থানীয় পশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের ওপর আস্তা হারিয়ে এখন হোমিও হলগুলোতে গিয়ে গরুর চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ রোগের আতঙ্কে কৃষক ও খামারিরা তাদের রোগাক্রান্ত গরু কম দামে বিক্রি করছেন। এ সুযোগে অধিক লাভের আশায় স্থানীয় কসাইরা রাতের আঁধারে এসব রোগাক্রান্ত গরু কিনে এনে দিনের বেলায় প্রকাশ্য মাংস বিক্রি করছেন। অথচ নিয়ম আছে গরু জবাইয়ের আগে ডাক্তারি সার্টিফিকেট প্রদর্শন করতে হবে প্রসাশনের লোকজনদের কাছে কিন্তু এসবের খোঁজ রাখে কে। পাঁচগ্রামের এক নারী খামারি রাবেয়া সুলতানা। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি একজন শিক্ষিত নারী। লেখাপড়া করে বিএ পাস করেছি। চাকরি হয়নি। বাবা-মা বিয়ে দিয়েছেন। স্বামীর সংসারে এসে পাঁচটি গরু ও তিনটি ছাগল দিয়ে একটি খামার করেছি। এর মধ্যে একটি গরু ও একটি ছাগল মারা গেছে আর দুটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গরু নিয়ে পশু হাসপাতালে গেলে ডাক্তার পাই না। পিওনরা বলে, স্যার বাইরে আছেন। বাধ্য হয়ে হোমিও চিকিৎসা নিয়েছি। বর্তমানে গরুগুলো ভালোই আছে। শ্রীপুর গ্রামের কৃষক মনতাজ উদ্দিন বলেন, আমি একজন কৃষক মানুষ। জমি চাষের পাশাপাশি বাড়িতে দুটি গরু লালন-পালন করছি। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবে একটি গরু মারা গেছে। আর একটি আক্রান্ত হয়ে পড়ে আছে। পশু হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারকে না পেয়ে বাড়িতে এসে এলাকার এক হাতুরি ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছি। কই ভালো তো হচ্ছে না। গরুটি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। কী হবে জানি না। জিন্দারপুর গ্রামের বাসিন্দা ইমতিয়াজ বলেন, দুটি গরুর মধ্যে একটি রোগাক্রান্ত ছিল। সেই গরু মহেশপুর বাজারের এক কসাইয়ের কাছে বিক্রি করেছি। গত বৃহস্পতিবার রাতে ভটভটি যোগে নিয়ে গেছেন। জবাই করেছে কি না তা আমার জানা নেই। পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে অবস্থিত ফাহিম হোমিও হলের চিকিৎসক কামরুল হাসান বলেন, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর চিকিৎসা নিতে প্রতিদিনই অনেকে আসছেন। আরসেনিক অ্যালবাম, মেলেনড্রিনাম, অ্যাপিসমেল ওয়ান এম সঙ্গে বেলেডোনা ও রাজস্টক ওয়ান এম ডোজে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ গরুই ভালো হয়েছে।  যেগুলো অবস্থা একেবারে খারাপ হয়েছে সেসব গরুর মধ্যে দু-একটি মারা গেছে। এ পর্যন্ত ২ শতাধিক পশুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কালাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাসান আলী বলেন, সারা দেশে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। কালাইয়েও দেখা দিয়েছে। কয়েকটি গরু মারাও গেছে। এ কারণে আমাদের চাপও বেড়েছে। রোগীর চাপে অনেকেই হোমিও চিকিৎসা নিতে পারে, তবে আমার জানা নেই। সময়মতো ভ্যাকসিন নিলেই এ রোগ আক্রমণের কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা সবসময় খামারি ও কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন, পশু হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণেই মূলত চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। গত মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রোগাক্রান্ত গরুর মাংস বাজারে বিক্রি হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছেও খবর এসেছে, তবে এ বিষয় নজরদারি করতে সব জনপ্রতিনিধিকে অনুরোধ করা হয়েছে। 

 

 

সর্বশেষ খবর