মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পানির অভাবে সোনালি আঁশ এখন কৃষকের গলার ফাঁস

বোয়ালমারী প্রতিনিধি

পানির অভাবে সোনালি আঁশ এখন কৃষকের গলার ফাঁস

বোয়ালমারীতে পাটের ফলন মোটামুটি ভালো হলেও পানির অভাবে সোনালি আঁশ পাট যেন কৃষকের গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে। পানির অভাবে পাট না কেটে অনেকে খেতেই ফেলে রেখেছেন। বৃষ্টি নেই। বর্ষায় নদ-নদী, খাল-বিলে, পুকুর-ডোবায় পানি নেই। তাই পাট জাগ দিতে পারছে না কৃষক। জানা গেছে, এ উপজেলা পাট উৎপাদনের দিক দিয়ে দ্বিতীয়। গুণে-মানে রয়েছে সুখ্যাতি। এবার অনাবৃষ্টির কারণে চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাট চাষিদের চরম ভোগান্তি ও কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি সঠিকভাবে পাট পচাতে না পারায় এ অঞ্চলের পাটের আঁশের মানও এবার নিম্নমুখির শঙ্কা রয়েছে। মহাজনদের থেকে ঋণ নেওয়া পাট চাষিরা ব্যাপক লোকসানে পড়ার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাট কেটে জমির পাশে বা রাস্তার ধারে, খাল-বিল বা জলাশয়ের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন চাষিরা। কেউ অল্প পানিতেই পাটের ওপর মাটি চাপা দিয়ে জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ পুকুর, খাল কিংবা ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে খাল ও নদীতে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। অনেকে আবার মাটি গর্ত করে, পুকুরে-রাস্তার খাদে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি জমিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে কষ্ট ছাড়াও অতিরিক্ত খরচ বাড়ছে পাট চাষিদের। কৃষকরা জানান, গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় এবার আবাদ বেশি হয়েছে। প্রখর রোদ্দুর, অনাবৃষ্টির কারণে পাট চাষের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে পানির সংকট। প্রতি বিঘায় পাট চাষে কমপক্ষে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন যদি ভালো হয় তাহলে প্রতি বিঘায় সর্বোচ্চ ৯ থেকে ১০ মণ পাটের ফলন পাওয়া যায়। তারপরেও যদি কাক্সিক্ষত দাম না মেলে তাহলে তাদের মাথায় হাত। কৃষি বিভাগ বলছে, পাট পচানোর পানির অভাবে এবার চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। চাষিদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ১০ লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয়। এ পদ্ধতিতে পাট পচালে পাটের আঁশের মান ভালো থাকে। চাষিদের এ বিষয়ে পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানায়, বোয়ালমারীতে বেশির ভাগই তোষা জাতের পাট চাষ করা হয়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এবার ১৬ হাজার ১১ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাট চাষ করেছেন কৃষকেরা। চাষের শুরুতে ও এখন বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টি না হওয়ায় হতাশ পাট চাষিরা। সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে খাল, বিল, নদী, নালা পানিতে ভরপুর থাকে। এবার বৃষ্টিপাত একেবারেই কম হওয়া ও প্রখর খরার কবলে অধিকাংশ খাল-বিল শুকনো। পানি না থাকায় পাট পচাতে পারছেন না চাষিরা। এ ব্যাপারে চতুল গ্রামের বিপুল মন্ডল বলেন, পাট কেটে কোথায় জাগ দিব। বেশি দামে শ্রমিক নিয়ে ভ্যান, নসিমনে করে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে নিয়ে রাস্তার পাশে খাদের পানিতে নিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। প্রচন্ড  দাবদাহে এবার পাট কাটতে গত বছরের তুলনায় শ্রমিক খরচ বেশি হয়েছে। দুই বিঘা জমির পাট কেটে খুব কষ্টে জাগ দিয়েছি। এ ব্যাপারে পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের জয়পাশা গ্রামের হরিদাশ মজুমদার বলেন, তিন বিঘা জমির পাট কেটে নানা জায়গায় জাগ দিয়েছি। পুকুর ভাড়া করেও পাট জাগ দিতে হয়েছে। এত জমিতে আর পাটের চাষ করব না। সোনালি আঁশের পাট যেন আমাদের গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে। কাদিরদি গ্রামের পাট চাষি ফারুক হোসেন বলেন, বর্ষায় বৃষ্টি না হওয়ায় এখনো বেশিরভাগ কৃষকের জমিতেই পাট রয়ে গেছে। পানি না থাকায় জাগ দেওয়ার সমস্যায় পাট কাটতে পারছি না। শেখর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ফলন মোটামুটি হলেও পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। বেকায়দার যেন শেষ নেই। ভ্যানে করে কয়েক কিলোমিটার দূরে পুকুরের অল্প পানিতে কোনো মতে মাটি চাপা দিয়ে পাট জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।

ময়না ইউনিয়নের বর্নিচর গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকের মজুরি বেশি, সার-ওষুধ-তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এবার আশপাশে কোথাও পানি নেই। পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। খাদ-পুকুর ভাড়া নিয়ে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি ভরে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। খেত থেকে মাথায় করে রাস্তায় ফেলা হচ্ছে, আবার সেখান থেকে ভ্যানে, ঘোড়ার গাড়িতে করে নিতে হচ্ছে। জানে আর কুলায় না। এ বিষয়ে বোয়ালমারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এস এম রাশেদুল হাসান বলেন, চাষিদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে পাট পচালে পাটের আঁশের মান ভালো থাকে। তারপরও অনাবৃষ্টি হলেও পাটের উৎপাদন খুব বেশি ব্যাহত হবে না বলে আশাবাদী।

সর্বশেষ খবর