বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ছিটমহল বিলুপ্তির আট বছর ‘হামা এলা সুখে আছি’

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

ছিটমহল বিলুপ্তির আট বছর ‘হামা এলা সুখে আছি’

‘হামা (আমরা) এলা (এখন) খুব সুখে আছি। আগোত (আগে) তো মাউরিয়া (এতিম) ছোয়ারমত (বাচ্চারমত) ছিনো (ছিলাম)। বাপ-মাও (বাবা-মা) মানে দ্যাশ (দেশ) ছিল না। এলা হামার বাপ-মাও সউগ (সব) আছে। এলা হামা মাথা উচা (উঁচু) করি (করে) কবার (বলতে) পাই (পারি) হামার দ্যাশ বাংলাদেশ’- এভাবেই বলছিলেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার কুচলিবাড়ী ইউনিয়নের বিলুপ্ত ছিটমহল বড়খেঙ্গি এলাকার বর্তমান মুজিব-ইন্দিরানগরের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব ছকিনা বেগম। একই এলাকার আঞ্জুয়ারা বেগম (৪৫) বলেন, ‘১৭ বছর আগোত (আগে) সোয়ামী (স্বামী) মরি (মারা) গেইছে (গেছে)। অনেক দিন ছিটমহলের লোক (মানুষ) হওয়ায় বিধুয়া (বিধবা) ভাতা বা কোনো সাহায্য কাহো (কেউ) করে নাই। খুব কষ্টে আছিনো (ছিলাম)। এলা বিধুয়া ভাতা পাই।’ ছিটমহল বিলুপ্তির আট বছর পূর্তিতে এভাবেই জীবন যাত্রার কথা বলছিলেন দুই নারী। ভারত-বাংলাদেশ সরকার যৌথ ঘোষণার মধ্যদিয়ে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট মধ্যরাতে ছিটমহলের নামে স্ব স্ব দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে থাকা ভূখণ্ডগুলো দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে মিলে যায়। এতে ওইদিন থেকে ব্রিটিশদের করে রাখা ছিটমহলের বিলুপ্তি ঘটে। ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় ৬৮ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়। নাগরিকত্বহীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের ও ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মানুষদের দুর্দশা লাঘব হয়। এতে ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দারা বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দারা ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন করে। এ সময় বাংলাদেশের মানচিত্রে যোগ হয় ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর জমি। সবচেয়ে বেশি ৫৯টি ছিটমহলের অবস্থান ছিল লালমনিরহাট জেলায়। এর মধ্যে পাটগ্রাম উপজেলায় ৫৫টি ছিটমহলের মধ্যে জনবসতিপূর্ণ ৩৮টি। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলো মাত্র আট বছরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে সরকার। প্রতি বছর উন্নয়নে বরাদ্দ থাকছেই। প্রত্যেকটি বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে পাকা সড়ক, জনবসতি অনুযায়ী কমিউনিটি ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশান, সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ, স্যানিটেশন, সুপেয় পানির জন্য টিউবওয়েল, কমিউনিটি সেন্টার, সোলার প্রদান করা হয়েছে। বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা নারী, প্রতিবন্ধীদের জন্য করে দেওয়া হয়েছে ভাতার কার্ড। ছিটমহল বিলুপ্তির আট বছরপূর্তি ও ছিটমহল বিলুপ্তির দিনটি পালনে এখানকার বাসিন্দারা প্রতি বছর বিশেষ প্রস্তুতি নেয়। সোমবার দিবাগত রাত ১২.০১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন। সকালে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান, বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কেন্দ্রীয় কমিটির (বাংলাদেশ) সভাপতি গোলাম মতিন রুমী। তিনি আরও জানান, গতকাল সকাল ১০টায় খেলা-ধুলা এবং প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর