বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাইস মিলের ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

রাইস মিলের ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন

ফরিদপুরের কানাইপুরে আবাসিক এলাকায় দুটি রাইস মিলের কারণে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। মিলের কালো ধোঁয়ায় এলাকাজুড়ে বিষাক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মিল দুটি থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়া ও ছাই ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাসাবাড়িতে রাখা খাবার পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিশু ও বয়স্করা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছে। কালো ধোঁয়ার ছাই বাসাবাড়িতে ছড়িয়ে সবকিছু নষ্ট করে দিচ্ছে। এমনকি মসজিদেও নামাজ পড়তে কষ্ট হচ্ছে মুসল্লিদের। ফলে সেখানে বসবাস করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অসহনীয় পরিবেশের মধ্য দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। মিল দুটির মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় তারা নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করেই মিলগুলো চালিয়ে আসছে। এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা একাধিকবার বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। তবে, কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরেজমিন পরিদর্শন করে মিল দুটি অচিরেই বন্ধ করার কথা বলেছেন। সরেজমিন কানাইপুর ইউনিয়নের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবাসিক এলাকা হিসাবে খ্যাত ১নং ওয়ার্ডের বিশ্বাসপাড়া ও সাহাপাড়ায় কয়েক বছর আগে ‘বর্ষা অটো রাইস মিল’ ও ‘আকাশ অটো রাইস মিল’ স্থাপন করা হয়। শুরুতেই আবাসিক এলাকায় মিল না করার জন্য স্থানীয়রা বাধা প্রদান করে। প্রভাবশালী মহলটি সেই বাধা উপেক্ষা করেই পরিবেশের ছাড়পত্র ও ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি না নিয়েই পাশাপাশি মিল দুটি স্থাপন ও চালু করে। মিল দুটি চালুর পর থেকেই স্থানীয়রা বেশ অসুবিধার মধ্যে দিনযাপন করছে। সাম্প্রতিক সময়ে মিল দুটির কালো ধোঁয়া এবং ছাই গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দা মো. নুরুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন বিশ্বাস, রাজ্জাক বিশ্বাস, পাচু ডাক্তার, কৃষ্ণসাহা জানান, কালো ধোঁয়া এবং ছাইয়ের কারণে তারা এখন মারাত্মক সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। মিলের কালো ছাই বাসাবাড়ির আসবাবপত্র, জামা-কাপড় সব কিছু নষ্ট করে দিচ্ছে। ঘরের মালামাল এমনকি খাবার পর্যন্ত নষ্ট হচ্ছে। দিনে একাধিকবার ঘর ঝাড়ু দিয়েও ছাই সরানো সরানো যাচ্ছে না। কালো ধোঁয়া ও ছাইয়ের কারণে চোখ জ্বালাপোড়া করে। শিশু ও বয়স্করা শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছে। পুকুরের মাছ মরে যাচ্ছে, গাছের ফল নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া মিলের প্রচন্ড শব্দে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা মারত্মকভাবে বিঘœ ঘটছে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম রুহুল আমিন জানান, মিল থেকে আসা ছাইয়ের কারণে নামাজ পড়া কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। সবসময় মসজিদ ঝাড়ু দিয়ে রাখলেও পর মুহূর্তে ছাই পড়ে মসজিদের ফ্লোর ও কার্পেটসহ বিভিন্ন জিনিস নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মুসল্লি বেশি হওয়ায় মসজিদের বাইরে নামাজ পড়তে বেশ অসুবিধা হয়। নামাজে দাঁড়ালে ছাই গায়ে এসে পড়ে। তারা জানান, মিলের ছাই কুমার নদে পড়ায় তারা সেই নদের পানিতে গোসল পর্যন্ত করতে পারেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ, ১নং ওয়ার্ডে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার বসবাস করে। এ ওয়ার্ডে বাজার, কিন্ডার গার্টেন স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দিরসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে তারা দীর্ঘদিন ধরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করে আসছেন।

সর্বশেষ খবর