শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বগুড়ায় সৌদির আজোয়া খেজুর

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় সৌদির আজোয়া খেজুর

এবার বগুড়ায় সৌদি আরবের আজোয়া খেজুরের ফলন ধরেছে। খেজুরের বাগানে গাছে থোকা থোকা খেজুর ঝুলছে। প্রথমে খেজুরগুলো সবুজ থাকলেও এখন কিছুটা পাক ধরে লাল হয়ে আছে। জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার আমড়া গোহাইল গ্রামের আলহাজ আবু হানিফার বাগানে এক নজর খেজুর দেখতে সাধারণ মানুষ ভিড় করছে। তার খেজুর চাষের সফলতার পর স্থানীয় অনেকেই সৌদি আরবের আজোয়া জাতের খেজুর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বগুড়ার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বেশির ভাগ সময় এখন গরমকাল থাকছে যে কারণে সৌদি আরবের আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেজুর চাষ করা সম্ভব। জানা গেছে, জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার আমড়া গোহাইল গ্রামের আলহাজ আবু হানিফা ২০১৮ সালে হজে যান। হজ থেকে ফেরার সময় বেশ কিছু আজোয়া খেজুরের বীজ সংগ্রহ করে আনেন। বীজগুলো দেশে নিয়ে এসে ২০১৯ সালে প্রথমে তিনি ১৯টি বীজ টবে রোপণ করেন। এর মধ্যে ১৬টি বীজের চারা বের হয়। টব থেকে তুলে নিজের ৯ শতক জমির মধ্যে আজোয়া খেজুর রোপণ করেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৩টি চারা গাছ হয়ে ওঠে। ওই ৯ শতক জমির মধ্যে তিনি কামরাঙ্গা, মিষ্টি তেঁতুল, আপেলকুল, বারোমাসি আম বারি ফোর, মাল্টা, ত্বীন ফল, জামরুল, দারুচিনি, লিচু, বড়ই, পেঁপে, থাই পেয়ারা, লেবু, আলু বোখারার চাষ করেছেন। তার বাগানের প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে। মিশ্র বাগান গড়ে যেমন সফলতা পেয়েছেন ঠিক তেমনি আজোয়াজাতের খেজুর চাষ করেও তিনি সফলতা পেয়েছেন। ২০২২ সালে কয়েকটি গাছে খেজুর ধরেছিল। সে খেজুর এর কিছু অংশ স্বজনদের মাঝে বিলি করেন আর কিছু অংশ দিয়ে বীজ তৈরি করে বিক্রি শুরু করেছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গাছে ফুল থেকে সবুজ রঙের ফলন আসে। পর্যায়ক্রমে সেটি বড় হয়ে ধীরে ধীরে লাল রঙের হয়ে আছে। আগস্ট মাসের শেষে বা সেপ্টেম্বরে খেজুর গাছ থেকে কাটা হবে। খেজুরগুলো পাকলে তিনি বিক্রি করবেন। আর কিছু খেজুর থেকে নতুন করে বীজ তৈরি করবেন। ১২০০ টাকা কেজি দরে ২ থেকে ৩ কেজি খেজুর ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন। আজোয়া খেজুর পরিপক্ব হলে বৃষ্টির পানি সহ্য করতে পারে না। বৃষ্টির পানি পড়লে খেজুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে কারণে বাগানের কিছু অংশজুড়ে শেড প্রদান করা হয়েছে। খেজুর বাগানে খেজুর ধরায় স্থানীয় চাষিরা সেই খেজুর বাগান দেখতে ভিড় করছে। স্থানীয় চাষিরা বীজ সংগ্রহের জন্য ধরনা দিচ্ছেন। বেকার যুবকরা আবু হানিফার কাছে আজোয়া খেজুর চাষের কলা কৌশল জেনে নিচ্ছেন। আবু হানিফা জানান, মাদরাসায় দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। ২০১৮ সালে হজ থেকে ফেরার সময় যেসব বীজ নিয়ে এসেছিল তা প্রথম দিকে চারা হবে কি না তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।

টবে চারা করার পর তিনি কৃষি বিভাগের সহযোগিতা গ্রহণ করেন। পরে ২০১৯ সালে সেগুলো মাটিতে রোপণ করেন। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে গাছগুলো। সেই গাছগুলোর মধ্যে একটিতে প্রায় ২০ মাস পর খেজুর ধরেছে। বর্তমানে গাছে যে দুটি থোকায় খেজুর ধরেছে তাতে আনুমানিক ১২ কেজি খেজুর পাওয়া যেতে পারে। তবে পরের বছর এর চেয়ে তিনগুণ বেশি খেজুর পাওয়া যাবে। খেজুরগুলো সব সময় নেট দিয়ে রাখতে হয়। আজোয়া খেজুরগুলোর পাকানোর জন্য তিনি প্রতিদিন গাছের যত্ন করেন। ভবিষ্যতে আরও বড় খেজুর বাগান করার চিন্তা রয়েছে তার। তিনি জানান, স্থানীয় চাষিরা তার কাছে আজোয়া খেজুরের বীজ চেয়েছেন। যুবকরা আসছেন কীভাবে এ চারা তৈরি করে বিস্তৃত করা যায়। খেজুর বাগান গড়তে বগুড়া হর্টি কালচারাল সেন্টারের কর্মকর্তারা তাকে সহযোগিতা করেছে বলে তিনি জানান। জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আদনান বাবু জানান, নন্দীগ্রাম উপজেলায় এ প্রথম আলহাজ আবু হানিফা সৌদির আজোয়া খেজুর চাষ করছেন। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে যেন বড় আকারে বাগান এবং বীজ তৈরি করা যায় সে বিষয়ে বাগান মালিককে বলা হয়েছে। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর হর্টি কালচারাল সেন্টার বনানীর উপপরিচালক ছাহেরা বানু জানান, নন্দীগ্রামে যে জাতের খেজুর চাষ হয়েছে তা আজোয়া জাতের। কিছুদিন পর এ ফলন কাটা হবে। এর আগে দুবাইভিত্তিক ভিন্নজাতের খেজুর চাষ হয়েছিল। তিনি বলেন, সৌদি খেজুর মরুভূমির ফল। এই আজোয়া খেজুর চাষে বিশেষ যত্ন নিতে হয়। দেশে এখন দীর্ঘসময় গরমকাল থাকায় সৌদি খেজুর চাষ করা সম্ভব। এর বীজের ব্যবস্থা করা গেলে চাষটি ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর