রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

উর্বরতা কমছে জমির হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

আগাছা দমনে বিষ প্রয়োগ

নীলফামারী প্রতিনিধি

উর্বরতা কমছে জমির হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

নীলফামারীতে কৃষি জমিতে আগাছা দমনে বিষ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন কৃষক। স্বল্প সময় ও খরচ অল্প হওয়ায় জমিতেই বিষ দিয়ে আগাছা নিধন করছেন তারা। এতে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি হুমকিতে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, খরচ একটু বেশি হলেও চাষাবাদের ১৫ দিন থেকে ১ মাস আগে জমিতে শ্রমিক ও হালচাষ দিয়ে আগাছা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। এতে জমির জৈবসারের পরিমাণ বেড়ে উর্বরতা শক্তি বাড়বে। রক্ষা পাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও। জানা যায়, নীলফামারীতে ফসলের খেত, সড়কের পাশে, উঠান, বাড়ির আনাচে-কানাচেসহ যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা আগাছা বিষ দিয়ে নিধন করা  হচ্ছে। আগে কৃষক খেত নিড়ানিসহ উঁচু-নিচু জমির আগাছা অপসারণে মজুর ও হাল চাষ দিয়ে আবাদের উপযোগী করতেন। এতে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি ও অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেত। হালচাষে খরচ বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প খরচে বিষ ছিটিয়ে জমির আগাছা নিধন করছেন কৃষক। বিষ প্রয়োগ করায় ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতির উপকারী কীটপতঙ্গ, কেঁচো, ব্যাঙ, কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ নানা জলজ প্রাণী। বিভিন্ন বিল-ঝিল মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। বিষাক্ত কীটপতঙ্গ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে দেশীয় প্রজাতির পাখি। কমছে পাখি সংখ্যাও। গো-খাদ্যের জন্য মাঠগুলো সবুজ ঘাসশূন্য হয়ে পড়ছে। ইরি-বোরো ঘরে তোলার পর আমন আবাদের পর জমিতে কচুরিপানাসহ বিভিন্ন আগাছা জন্মে। এই আগাছা নিধনে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়ভিটা বাজার এলাকার কৃষক আবদুল মতিন বলেন, ধান কাটার পর জমিতে প্রচুর আগাছা জন্মায়। এক বিঘা জমির আগাছা দমন করতে প্রায় পাঁচ-সাতজন শ্রমিক দরকার। এতে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা মজুরি গুনতে হয়। সেখানে ১৪০ টাকার বিষ দিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আগাছা মরে যাচ্ছে। তবে কৃষি শ্রমিক ও হালচাষ দিয়ে ঘাস মাটিতে পুঁতে দিলে জমির উর্বরতা বাড়ে। কিশোরগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক জ্যোতি চন্দ্র রায় বলেন, ট্রাক্টর, গরুর হাল কিংবা শ্রমিক দিয়ে আগাছা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে জমির উর্বরতা ও অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বর্তমান আগাছা দমনে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে মাটির গুণাগুণ নষ্ট ও অণুজীবের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যত্রতত্র এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মাটি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করছে। এসব রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টি বা আইন করে এখনই বন্ধ করা দরকার। কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, কৃষকরা সময় ও টাকা বাঁচানোর জন্য আগাছানাশক ব্যবহার করছেন। এতে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং ফসলের কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায় না।

সর্বশেষ খবর