সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাল্যবিয়ের কারণে ৩৫ শিক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নিতে পারেনি

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

বাল্যবিয়ের কারণে ৩৫ শিক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নিতে পারেনি

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নে বাল্যবিয়ের প্রকোপ বেড়েছে। এ ইউনিয়নের একটি বালিকা বিদ্যালয়ের ৩৫ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের কারণে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। ফল বিপর্যয়ের পর এ ঘটনা বেশ আলোড়ন তুলেছে এলাকায়। সম্প্রতি ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীরও গোপনে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ৪৩ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ফরম ফিলআপ করেছিল। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মাত্র আটজন। পাস করেছে চারজন শিক্ষার্থী। শিক্ষক শিক্ষার্থী,  কমিটির সদস্য এবং অভিভাবকরা বলছেন বাকি ৩৫ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। বিদ্যালয়টি হলো বোয়ালমারী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। ঢাকা-বাংলাবান্ধা মহসড়কে বোয়ালমারী বাজারের পাশেই দৃষ্টিনন্দন একটি এলাকায় এই বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গড়ে উঠেছে। রয়েছে খেলাধুলার মাঠ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গ্রামীণ পরিবেশ। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিদ্যালয়। ২০০২ সালে এমপিওভুক্ত হয়। ২০২২ সালে একটি নতুন ভবনও স্থাপন করা হয়। এ বিদ্যালয়ে ১০ জন শিক্ষক নিয়মিত পাঠদানের সঙ্গে সংযুক্ত আছেন। বিদ্যালয়ের পাশের উত্তর বোয়ালমারী, দক্ষিণ বোয়ালমারী, ছোপাগজসহ এ এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রতিনিয়ত নারী শিক্ষার্থীদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাতের আঁধারে বা অন্য কোনো গহিন এলাকায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের অমতে বিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা। উত্তর বোয়ালমারী গ্রামের হাজেরা বেগম জানান, আমরা গরিব লোক। ভালো ছেলে পেয়েছি তাই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারি না। তবে শিক্ষক এবং অভিভাবক মহল পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। শিক্ষকেরা বাল্যবিয়ে এবং ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য অভিভাবকদেরই বেশি দায়ী করেছেন। অন্যদিকে অভিভাবকরা বলছেন শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এমনটি ঘটছে।

 উত্তর বোয়ালমারী গ্রামের ফাতেমা বেগম জানান, শিক্ষকদের স্কুলের প্রতি গুরুত্ব কম। প্রধান শিক্ষক গুরুত্ব দিলে অন্য শিক্ষকরা চালু হয়। শিক্ষকরা গুরুত্ব দিলে ছাত্রীরা পড়াশোনা করবে। কিন্তু এখানে গুরুত্ব কম। প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলছেন আমরা মা সমাবেশ করি। শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বলে আসি। স্কুলের অর্থ দিয়ে ফরম ফিলআপ করাই। পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ভাড়াও দেই। তারপরও অভিভাবকরা মেয়েদের অল্প বয়সে গোপনে বিয়ে দেন। পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে দেয় না। অভিভাবকরা সচেতন নয়। বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আকবর আলী জানান, করোনাকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই এলাকার মানুষ সচেতন নয়। আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু কাউকে বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি। সংশ্লিষ্ট শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলছেন বোয়ালমারী এলাকায় একটি সিন্ডিকেট বাল্যবিয়ের সঙ্গে জড়িত। তারা রাতের আঁধারে অন্য ইউনিয়নে নিয়ে বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন। এর বিনিময়ে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করছেন। তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা প্রার্থনা করেছেন। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিনিয়ত বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে তেঁতুলিয়ায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, এ ব্যাপারে তারা সচেষ্ট রয়েছেন। তবে বোয়ালমারী স্কুলের ঘটনাটি বেদনাদায়ক। আর যেন কোনো শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার না হয় এ ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর