সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিন সংকটে গরুর লাম্পি রোগের প্রকোপ

সৈয়দপুর প্রতিনিধি

নীলফামারীর সৈয়দপুরে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিষেধক ভ্যাকসিনের অভাবে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নসহ পৌরসভা এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার গবাদিপশু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলায় ইতোমধ্যে ২০টি গরু মারাও গেছে। রোগ নিরাময় না হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা সস্তায় গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ ছাড়া একই উপসর্গে ছাগলও আক্রান্ত হয়েছে। লাম্পি স্কিন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সৈয়দপুরের খামারি ও গৃহস্থ পশু পালনকারীরা। স্থানীয় পশু হাসপাতালে প্রতিষেধক ভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকায় ভ্যাকসিন সংকট চলছে হাসপাতালে। সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. শ্যামল কুমার রায় জানান, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুটি গুটি হয়ে ফুলে উঠছে। পরে সেখানকার চামড়া উঠে যাচ্ছে। এরপর ধীরে ধীরে গরুর খাওয়া বন্ধ হয়ে আক্রান্ত গরুর মৃত্যু হচ্ছে। অনেক খামারি ও গৃহস্থ পশু পালনকারীরা দিশাহারা হয়ে গ্রামের হাতুড়ে পশু চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হচ্ছেন। ফলে বিপদ আরও বাড়ছে। হাতুড়ে পশু চিকিৎসকরা কিছু না বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথার ইনজেকশন পুশ করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এদিকে প্রতিদিনই ১৫-২০ জন খামারি লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা নিতে পশু হাসপাতালে ভিড় করছেন। তবে অন্যান্য এলাকার চেয়ে এ উপজেলায় শতকরা ২০ ভাগ গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। লাম্পি স্কিন ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক না থাকায় আমরা রোগ প্রতিরোধে গোয়ালঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে জ্বর ও ব্যথার ওষুধ। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণ, ফ্রি ভেটেরিনারি মেডিকেল ক্যাম্প কার্যক্রম চলমান রয়েছে উপজেলাজুড়ে।

মূলতঃ মশা-মাছির কামড়ে মূলত এ রোগ ছড়াচ্ছে। লাম্পি স্কিন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে পরিমাণ মতো খাবার সোডা, গুড়, নিমপাতার রস ও লবণ মিশিয়ে স্যালাইন তৈরি করে খাওয়ানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পল্লী পশু চিকিৎসকদের নিয়ে সভা করে চিকিৎসা পদ্ধতি জানানো হয়েছে। মশা-মাছি থেকে রক্ষায় মশারি কিংবা কয়েল ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে খামারিদের। গবাদিপশুর থাকার জায়গা সার্বক্ষণিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অন্যথায় রোগ আক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গরুর মধ্যে ছড়াবে এ রোগ। এ ছাড়া এরকম উপসর্গ ছাগলের মধ্যেও দেখা দিয়েছে। রোগ প্রতিরোধে ছাগল মালিকদেরও একই ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এ উপজেলায় লক্ষাধিক গরু লালন-পালন করা হয়। লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে হাসপাতালের জন্য ৫ হাজার প্রতিষেধক ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, যা শেষ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে আরও ভ্যাকসিনের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে সরবরাহ রয়েছে এমন ভ্যাকসিন বাজার থেকে কিনে নিয়ে ব্যবহার করার জন্য খামারি ও গৃহস্থ পশু পালনকারীদের ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে। এতে করে রোগের প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমতে শুরু করেছে বলে দাবি করেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর