রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভয়ংকর চায়না দুয়ারিতে নিধন দেশি মাছ

পাবনা প্রতিনিধি

ভয়ংকর চায়না দুয়ারিতে নিধন দেশি মাছ

পাবনায় নদী, খাল-বিলে চায়না দুয়ারি জালে মারা পড়ছে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ। সুজানগর ও বেড়া উপজেলায় পদ্মা, যমুনা নদী, গাজনার বিল, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুরসহ পুরো চলনবিলাঞ্চলে বিভিন্ন দেশি মাছের পোনা শিকার করে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হ"েছ বাজারে। নিষিদ্ধ জালে মাছ ও জলজপ্রাণী নিধন হওয়ায় প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মৎস্যজীবী ও মৎস্য কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশে চায়না দুয়ারির ব্যবহার শুরু হয় বছর পাঁচেক আগে। শুরুতে এ জাল চীন থেকে আমদানি করায় এর নাম দেওয়া হয় চায়না দুয়ারি। এখন এ ধরনের জাল দেশেই তৈরি হ"েছ। সূক্ষ্ম জালে গোলাকৃতি বা চারকোনার রড পরিয়ে খোপ খোপ করে বিশেষ ধরনের ফাঁদের মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়। এই ফাঁদ উ"চতায় দেড় থেকে দুই ফুট এবং লম্বায় ৬০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। অল্প বা গভীর, যে কোনো পানিতে এ ফাঁদ পেতে রাখলে তাতে বড় মাছ, পোনা, এমনকি ডিম পর্যন্ত ধরা পড়ে। দ্রুত এ জাল মাছ শিকারিদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। মাছের জন্য মারাত্মক হুমকি হওয়ায় মৎস্য অধিদফতর এ জাল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। চায়না দুয়ারি দিয়ে পোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকারের মাছ ধরায় উপজেলার নদী ও প্রাকৃতিক জলাশয় মাছশূন্য হয়ে পড়ছে। বাজারে পোনা বা ছোট আকারের দেশি মাছ মিললেও স্বাভাবিক আকারের মাছ মিলছে না। নিষিদ্ধ হলেও সাথিয়া-বেড়া উপজেলার প্রতিটি জালের দোকানেই এ জাল বিক্রি হ"েছ। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও প্রতিকার মিলছে না। বেড়া বাজারের চার-পাঁচজন জাল ব্যবসায়ী বলেন, শুধু এ বাজারেই ১৫টির মতো জালের দোকান আছে। এসব দোকানে এক সময় কারেন্ট জাল বিক্রি হতো। এখন চায়না দুয়ারি বিক্রি হ"েছ বেশি। সরেজমিন দেখা যায়, বেড়া বাজার ছাড়াও মোহনগঞ্জ, রাকশা, আমিনপুর, নাকালিয়াসহ উপজেলাজুড়ে অর্ধশতাধিক জালের দোকানে বিক্রি হ"েছ চায়না দুয়ারি।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেড়ায় আটটি নদ-নদীসহ প্রচুর প্রাকৃতিক খাল-বিল রয়েছে। এসব জলাশয় এক সময় মাছে ভরপুর থাকলেও এখন কমে গেছে। এর পরও অবশিষ্ট যা আছে, শত শত চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে অবাধে মারা হ"েছ। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘চায়না দুয়ারির কারণে দেশি মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। এরই মধ্যে বেশকিছু অভিযান চালিয়ে জাল জব্দ করেছি। এ জাল ব্যবহারকারীরা খুব ধুরন্ধর।’ কয়েকজন মৎস্যজীবী জানান, বর্তমানে মা মাছের ডিম পাড়ার সময়। এ সময় রেণু ও পোনায় এলাকা ছেয়ে যায়। তাছাড়া মাছগুলো নীরব থাকায় শিকারেও সুবিধা হয়। চাটমোহর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবদুুল মতিন বলেন, আইনিভাবে মা মাছ ধরা দন্ডনীয় অপরাধ।

 শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদুয়ানুল হালিম জানান, অবৈধভাবে মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যব¯'া নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর