সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

টানা বৃষ্টিতে স্বস্তি কৃষকের ব্যস্ত বীজতলায়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

টানা বৃষ্টিতে স্বস্তি কৃষকের ব্যস্ত বীজতলায়

খেতের পানিতে লাঙ্গল-জোয়াল আর প্রযুক্তির লাঙ্গলের শব্দ, দূর থেকে ভেসে আসা কৃষকদের নানা হাঁকডাকে এখন মুখরিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের দিগন্ত জোড়া মাঠ। সবাই কর্মব্যস্ত। এ দৃশ্য হাওরবেষ্টিত জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাষের মাঠের। কৃষকরা বলছেন, ভরা বর্ষায়ও দেখা মেলেনি বৃষ্টির। বৃষ্টি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন আমন ও পাট চাষিরা। কারণ আমন চাষ বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল আর পাট জাগও নির্ভর করে বর্ষার পানির ওপর। তারা ধরেই নিয়েছিলেন এ বছর ফসলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। গত এক সপ্তাহের ভারি বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরেছে তাদের। খাল-বিলে দেখা মিলছে পানির, আর চাষিদের ব্যস্ত সময় কাটছে জমি ও আমনের বীজতলা তৈরিতে। কৃষকরা বলছেন, প্রতিনিয়ত সারসহ কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করেছিলেন তারা। তবে কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাত কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছেন তাদের। জানা যায়, উপজেলা সদর, বুড়িশ্বর, পূর্বভাগ, হরিপুর, চাপড়তলা, ধরম ল, গোকর্ণ, কুন্ডা ও গুনিয়াউক ইউনিয়নের জমিগুলো খালি পড়ে আছে। আমন চাষের ভরা মৌসুমেও সেচ সংকটের কারণে অনেকেই এখনো ধান রোপণ করতে পারেনি।

সম্প্রতি এক সপ্তাহের ভারি বৃষ্টির ফলে খালবিল পানিতে ভরে উঠেছে।

 জমিতে চলছে হাল চাষ, সেচ দেওয়া, বীজতলা তৈরির ধুম। নাসিরনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর প্রায় সাত হাজার হেক্টর আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এরমধ্যে বীজতলা আড়াইশ হেক্টর। মাসের পর মাস খরার করাণে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন।

উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের তিলপাড়া গ্রামের কৃষক সুনিল সরকার জানান, মনে মনে ভাবছিলাম এই বছর আর খেত করতাম না। মাসের পর মাস বৃষ্টি নেই। কিন্তু হঠাৎ কইরাই কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হওনে জমিত আইলাম। আইজকা খেতের ঘাস পরিষ্কার করতাছি। কাল আইসা বীজতলা ছিটাই যামু। ধরমন্ডল ইউনিয়নের কৃষক ইকবাল মিয়া বলেন, দশ দিন আগেও জমি চাষ করুম এই চিন্তা ছিল না, কিন্তু টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে খালে পানি আইছে। জমিতেও মেলা পানি জমছে। এখন ধানের চারা আইন্যা লাগামু। আর কিছুদিন এইভাবে বৃষ্টি হইলে এই বার ধান ভালোই ফলন অইব। কৃষক মোহন লাল বলেন,  সেচ খরচ, সারের দাম ও শ্রমিকের খরচ দিয়ে এক বিঘা আমন ধান ঘরে তুলতে খরচ পড়বে প্রায় ২৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে বৃষ্টি নেই। অল্প কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বীজতলা রোপণ করতেছি ঠিকই। কিন্তু নতুন করে বৃষ্টি না হলে প্রতি বিঘাতে ৬-৭ হাজার টাকা লোকসান হবে। গত বছরের চেয়ে ডিজেলের দাম বাড়ানের কারণে সেচের খরচও বেশি। সার আর শ্রমিকের দাম আরও চড়া। কৃষাণি সুবলা রানী দাস বলেন, আমি নিজেই ২০ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করছি। কয়েকদিন পর খেতে চারা লাগামো।

নাসিরনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, বেশ কিছুদিন বৃষ্টি না হওয়ায় এবং বর্ষার পানি না আসায় আমনের বীজতলা তৈরি নিয়ে কৃষকের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টির কারণে কৃষক এখন তাদের জমিতে বীজতলা তৈরি করতে পারছে। এই বীজতলা যেন আদর্শ বীজতলা হয় সে জন্য আমাদের কৃষি অফিস থেকে প্রতিনিয়ত কৃষদের পরামর্শ  দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর