সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

অন্যরকম বিয়ে!

শেরপুর প্রতিনিধি

বর জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী ও খর্বাকৃতির এবং উচ্চতা ৩ ফুট, বয়স ২৮। আর কনে ৫ ফুটের একটু নিচে। বিয়ে অসম বলে মানুষের বাড়তি আনন্দ ছিল পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে। বর খর্বাকৃতির বলে কেউ তার কাছে বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। বর পেশায় মোটরসাইকেল মিস্ত্রি। দুই শতাধিক পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও কেউ রাজি হয়নি। অবশেষে বিয়ে হলো। বরের নাম খোরশেদ আলম আর কনের নাম খাদিজা আক্তার বর্ষা (১৯)। বরের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের মধ্য বয়ড়া আর কনের বাড়ি শেরপুর পৌর এলাকার দিঘারপাড় মহল্লায়। বিয়েতে দাওয়াতি ছিলেন ছয় শতাধিক মানুষ। তবে হাজার খানেক মানুষ এসেছিলেন এই দম্পতিকে দোয়া করতে। হাজারো মানুষের আনাগোনা লাইটিং গেট আনন্দে-বিনোদনে বিয়ে বাড়ি মুখরিত হয়ে ওঠে। তবে বিয়ের খরচ বহন করেছে এলাকাবাসী ও খোরশেদের সহকর্মীরা। শনিবার পাত্রের বাড়িতে বিশাল বৌভাতের আয়োজন করা হয়। শুক্রবার রাতে কনের বাড়িতে দুজনের ধর্মীয় ও আইনমতে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

স্থানীয়রা বলেছেন, খোরশেদ-বর্ষার বিয়ে সমাজের অনন্য এক দৃষ্টান্ত। দাওয়াতি মানুষ এই দম্পতিকে মন ভরে আশীর্বাদ ও নানা পুরস্কার দিয়েছেন। মানুষেরা কনের পরিবার ও কনের এই ত্যাগের প্রশংসা করেছেন।  জানা গেছে, সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের মধ্য বয়ড়া গ্রামের মাখন মিয়ার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় খোরশেদ আলম। তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। সংসারের হাল ধরতে অনেকটা বাধ্য হয়েই জীবিকার তাগিদে ১৪ বছর আগে মোটরসাইকেলের গ্যারেজে কাজ নেন খোরশেদ। খর্বাকৃতির হওয়ায় এখানেও বিপত্তি হয়। অবশেষে আমিনুল ইসলাম নামে এক গ্যারেজ মালিকের দয়ায় মোটরসাইকেলের পাকা মিস্ত্রি হয়ে ওঠে খোরশেদ। দীর্ঘদিন ধরে ছয় সদস্যের পরিবারের দায়িত্বও পালন করে আসছেন তিনি। কনের বাবা বাচ্চু মিয়া বলেছেন, আমি এ বিয়েতে খুব খুশি। মেয়ে-জামাই খর্বাকৃতির হলেও কর্ম করতে পারে এবং খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ভালো মানুষ। মেয়ের অনুমতিতেই এ বিয়ে হয়েছে। বর্ষা এটুকু ত্যাগ করে আমার কথা শুনে খোরশেদকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরেই এলাকায় মানুষের আনাগোনায় খুশির আমেজ চলছে। আমি নিজেও দাওয়াতে গিয়েছিলাম। এ অসম বিয়েতে কনের ত্যাগটা মনে রাখার মতো। এখন থেকে ওই পরিবারের আরও বিশেষভাবে খোঁজখবর রাখব।

সর্বশেষ খবর