সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

রেলওয়ের জায়গা দখলের হিড়িক

সৈয়দপুর প্রতিনিধি

রেলওয়ের জায়গা দখলের হিড়িক

নির্বাচনী বছরে সৈয়দপুরে রেলওয়ের জায়গা দখলের হিড়িক পড়েছে। অর্থের বিনিময়ে নেপথ্যে মদদ দিচ্ছেন রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলে অভিযোগ রয়েছে। এবারে দখলবাজরা রেলওয়ের আবাসিক ভবনের বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘেরা রেলওয়ের ভূ-সম্পদ দখলে নিয়ে দোকান নির্মাণ করছে। অনেক দখলবাজ দুই/তিনটি রেল কোয়ার্টার ভেঙে আরসিসি পিলার দিয়ে নির্মাণ করছে বহুতল ভবন। এদের হাত থেকে রেহাই মিলছে না রেলওয়ে কলোনির জলাধারগুলোও। এসব দখলবাজি চলছে সরকারি দলের নাম ব্যবহার করে। ছাত্রলীগ সৈয়দপুর পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুজ্জামান শুভর নেতৃত্বে শহরের অফিসার কলোনি এলাকায় (নার্সারি সংলগ্ন) বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘেরা রেলওয়ের আবাসিক ভবনের জায়গা দখল করে দোকানঘর গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। এ স্থান থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে রেলওয়ের ভূ-সম্পদের ৭ নম্বর কাচারি ঘর ও রেলওয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (ইনচার্জ) কাজী ওয়ালী-উল হকের কার্যালয়। এ ছাড়াও ওই কর্মকর্তার অফিসের ৩০০ গজ দূরে মুন্সিপাড়া রেল কলোনির ইসলামিয়া স্কুলের পেছনে দুই/তিনটি রেল কোয়ার্টার ভেঙে ওয়াহেদুল হক নামের এক কাগজ ব্যবসায়ী আরসিসি পিলার দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন।

 অতি নির্ভার হয়ে। ওই ব্যবসায়ীর মূল ব্যবসা রেলওয়ের কোয়ার্টার দখল ও তা অন্যের কাছে লাখ লাখ টাকা মূল্যে বিক্রি করা। এ অনৈতিক কর্মকান্ড করে তিনি এখন কোটিপতি। প্রায় ১৫ বছর আগেও ছিলেন কপর্দক। তিনিও সরকারি দলের সঙ্গে সখ্য ও অসাধু রেল কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বেশ দাপটের সঙ্গে দখলবাজি চালিয়ে আসছেন। শহরের মিস্ত্রিপাড়া রেল কলোনির পানির জলাধার দখল করে বাড়ি নির্মাণ করছেন পারভেজ, জহির ও রুবেল নামের ব্যক্তি। এমন দখলবাজির ঘটনা প্রতিদিন রেলওয়ের ১৫টি কলোনিতে ঘটছে। একই কায়দায় নির্বাচনী বছরকে ঘিরে শহরের বাজার এলাকায় রেলওয়ের কাছ থেকে লিজ নেওয়া পৌর ভূমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের মচ্ছব চলছে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ পেয়েও অজ্ঞাত কারণে দখলবাজি ঠেকাতে নেন না কোনো উদ্যোগ। এমনও ঘটনা রয়েছে শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ সড়কের পাশের পুরো একটি রেল কলোনি ব্যবসায়ীরা দখলে নিয়ে মার্কেট গড়ে তুলেছে। অচেনা কোনো লোক গিয়ে সহসাই চিহ্নিত করতে পারবে না সেখানে একটি পুরোদস্তুর রেল কলোনি ছিল। কথা হয় সাবেক পৌর কাউন্সিলর আকতার হোসেন ফেকু, রাজনীতিক রুহুল আলম মাস্টার ও সচেতন নাগরিক সমাজের আশরাফুল আলমের সঙ্গে। তারা বলেন, বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর সৈয়দপুরে রেলওয়ের জায়গা, কোয়ার্টার দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। লেনদেন হয় লাখ লাখ টাকায়। স্থানীয় নেতারা ভোট ও নোটের আশায় মুখ খুলে না। আর এ সুযোগটা কাজে লাগায় রেলওয়ের ভূ-সম্পদ ও গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা। এসব ব্যক্তিরাও নগদ অঙ্কে ফুলে-ফেঁপে যান। বিশেষ করে গত ২৪ জুলাই রেলওয়ের দখল হয়ে যাওয়া ভূ-সম্পদের তালিকা করার নির্দেশনা হাই কোর্ট কর্তৃক জারি হওয়ায় দখলবাজি নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে সৈয়দপুরে। বিশিষ্টজনরা আক্ষেপ করে বলেন, ওই নির্দেশনা ২৫ জুলাই সংবাদপত্রে দেখে ব্যবসায়ীরা কোর্টকেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তারা আরও জানান, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দখলবাজরা বড়, না আইন বড়। এ ধরনের কথা এখন মুখে মুখে ফিরছে। মুঠোফোনে রেলওয়ের আবাসিক এলাকা ও বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘেরা জায়গা দখল করে দোকানঘর নির্মাণকারী ছাত্রলীগ নেতা শেখ শহিদুজ্জামান শুভকে বারবার ফোন দিলেও রিসিভ না করায় মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। সৈয়দপুর গণপূর্ত বিভাগের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কারখানা) শরিফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খুব শিগগিরই দখলবাজদের অবৈধ অবকাঠামো ভেঙে ফেলা হবে। গণপূর্ত ও ভূ-সম্পদ বিভাগের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (ইনচার্জ) কাজী ওয়ালী-উল হক বলেন, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে দখলবাজদের বিরুদ্ধে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে সব অবৈধ স্থাপনা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর