সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঋণের লোভ দেখিয়ে লাপাত্তা এনজিও ‘নীড় ফাউন্ডেশন’

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

সহজশর্তে বেশি টাকা ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩০-৩৫ লাখ টাকার সঞ্চয় নিয়ে পালিয়েছে কথিত ‘নীড় ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ভুয়া এনজিও। গত সোমবার ঋণদানের আগের দিন থেকে লাপাত্তা এনজিওটি। ভুক্তভোগীরা জানান, অল্প সঞ্চয় ও সুদে অধিক ঋণ দেওয়ার কথা বলেছিল নীড় ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা। তাদের টার্গেট ছিল ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়ী। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে সঞ্চয় নিয়েছে এনজিওটি। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমারখালী পৌরসভার কাজীপাড়া টিঅ্যান্ডটি কার্যালয়ের সামনে লাভলী খাতুনের দুই তলা পাকা বাড়ির নিচ তলা ভাড়া নেয় নীড় ফাউন্ডেশন।

 ভাড়া নিয়ে ছয়জন ব্যক্তি সেখানে প্রায় ১৫-২০ দিন এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা করে ওই প্রতারক চক্রটি। তারা উপজেলার আলাউদ্দিন নগর, যদুবয়রা, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকার ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে। গ্রাহকদের অল্প সঞ্চয়ে বেশি ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামানত সংগ্রহ করে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. হাবিবুর রহমানের ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দেয় মাঠ কর্মীরা। মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই চক্রটি প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩০-৩৫ লাখ টাকার সঞ্চয় ও জামানত সংগ্রহ করে। গত মঙ্গলবার ৭ আগস্ট তাদের ঋণ প্রদানের কথা ছিল। কিন্তু ঋণ না দিয়ে আগের দিন সোমবার বিকালেই চক্রটি পালিয়ে যায়। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, বাড়ির মালিক লাভলী খাতুনের যোগসাজশে চক্রটি তাদের সঙ্গে এ রকম প্রতারণা করার ফাঁদ পেতেছিল। গতকাল সকালে কথিত নীড় ফাউন্ডেশনের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, এনজিওর সাইনবোর্ডটি খুলে ফেলা হয়েছে। গেটে তালা লাগানো। কিছু সংখ্যক ভুক্তভোগী দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় যদুবয়া জয়বাংলা বাজারের পিঁয়াজ ও পাট ব্যবসায়ী আবদুল মোমিন ফারাজী বলেন, কিছুদিন আগে নীড় ফাউন্ডেশন নামের এনজিও থেকে কয়েকজন তার বাড়িতে গিয়েছিল। তাকে ৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় চেয়েছিল। ঋণ পাওয়ার আশ্বাসে তিনি ২৫ হাজার ৭২৫ টাকা জমা দিয়েছিলেন। গত মঙ্গলবার তার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সন্দেহজনক মনে হওয়ায় গত সোমবার বিকালে তিনি এনজিওর অফিস দেখতে আসেন। এসে দেখেন সবাই পালিয়েছেন। তার দাবি, বাড়ির মালিকের যোগসাজশে এনজিওর নামে তারা প্রতারণা করেছে। এ ব্যাপারে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনওর) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকার হৃদয় হোসেন নামে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারী বলেন, তিনি ২ লাখ টাকা ঋণের জন্য ১৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন। গত মঙ্গলবার ঋণ আনতে গিয়ে জানতে পারেন তারা সবাই পালিয়ে গেছে। তবে যোগসাজশ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বাড়ির মালিক লাভলী খাতুন বলেন, ১০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় নিচতলা ভাড়া নিয়েছিল নীড় ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিওর ম্যানেজার হাবিবুর রহমান। চুক্তিনামা করবে করবে বলে তারা পালিয়ে গেছে। সংস্থার এরিয়া ম্যানেজার পরিচয় দেওয়া হাবিবুর রহমানের মোবাইলে ফোন দিলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। কুমারখালী থানার ওসি মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, বাড়িওয়ালা একটি অভিযোগ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা যদি এ ব্যাপারে অভিযোগ করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর