শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভাঙনে দিশাহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

ভাঙনে দিশাহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ

লালমনিরহাটে দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সদর ও আদিতমারী উপজেলা সংলগ্ন তিস্তা নদীতে কমপক্ষে সাতটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ইতোমধ্যে এসব এলাকার ফসলি জমি, বসতভিটা বিলীন হতে শুরু করেছে। হুমকিতে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। অনেকে বসতভিটা হারিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন অন্যের জমিতে। স্থানীয়দের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতি বছরই নদীভাঙনের শিকার হচ্ছেন তারা। হাতীবান্ধায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে গতকাল তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার যা বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচে। এর আগে সোমবার তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৩৫ যা বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ায় নদীভাঙনের কবলে পড়া সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরার বাসিন্দা আবদুল গফুর জানান, পৈতৃক ভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে অনেক আগে। এ পর্যন্ত চারবার বাড়ি সড়িয়ে অন্যের জমিতে থাকার পর অনেক কষ্টে জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন তিনি। এ বছর সেই বাড়িটিও নদীতে চলে গেল। গফুর বলেন, আমার বাড়ি পুরোটা ভেঙে গেলে আরও অনেক বাড়িঘর, মসজিদসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বীলন হয়ে যাবে। একই এলাকার মরিয়ম বেগম জানান, আজকেই (বৃহস্পতিবার) তিনটা বাড়ি নদীতে হারিয়ে গেছে। আরও কয়েকটি বাড়ি সড়িয়ে নিচ্ছেন লোকজন। পাশেই থাকা শফিকুল ইসলাম জানান, রোজগারের জন্য ঢাকায় ছিলাম। বাড়ির লোকজন ফোনে জানাল জমি, বাড়ি ও গাছপালা সব নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা চন্ডিমারীর খয়বর জানান, হঠাৎ বন্যা আসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। পানি কমে যাওয়ায় আবার ভাঙন আতঙ্কে আছি। বাহাদুর পাড়ার বাসিন্দা মোফা মিয়া জানান, গত বছর নদীভাঙনে বাড়ি সড়িয়ে নিয়ছি। এবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে আবার বাড়ি সড়িয়ে নিতে হবে। একই মন্তব্য করেন বাগডোরা, চন্ডিমারী, রাজপুরসহ ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজন। সবার দাবি বন্যার সময় ত্রাণ বা অর্থ সহায়তা না দিয়ে নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ অথবা নদী খননের মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধের। খুনিয়াগাছ ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান মণ্ডল বাদল বলেন, নদীর গভীরতা কম থাকায় অল্পতে নিম্নাঞ্চল ও লোকালয়ে পানি ঢুকে যায়। তাছাড়া পানি কমলে ভাঙন চলেই। এবারও বাগডোরায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাট জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, নদীতে পলি পড়ায় পানি ধারণ ক্ষমতা কমেছে। অল্প পানিতে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর শুরু হচ্ছে ভাঙন। এতে প্রতি বছর ভূমিহীন ও গৃহহীনের সংখ্যা বাড়ছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, আপদকালীন কাজ হিসেবে এসব পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর