শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সীমান্তবাসী

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সীমান্তবাসী

বন্যায় বিধ্বস্ত বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ

ময়লা আর স্যাঁতসেঁতে কাদামাটি। এরই মধ্যে দুমড়ে মুচড়ে পড়েছে বসতঘর, দোকানপাট ও ফসল। আবার কোথাও কোথাও ভেঙে পড়েছে সড়কে ওয়াল। উঠে গেছে সড়কের বিটুমিন। তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এমন সব চিত্রের দেখা মিলছে রাঙামাটির সীমান্তবর্তী অঞ্চল পাঁচটি উপজেলায়। সেগুলো হচ্ছে- বিলাইছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও লংগদু উপজেলা। সম্প্রতি হঠাৎ বন্যায় তলিয়ে যায় ওইসব এলাকার নিম্নাঞ্চল। সে সময় পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় অর্ধলাখ পরিবার। এখন পানি কমে গেলেও হিসাব গুনতে হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের সহায়তা না পেলে অনেকের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়বে। হয়তো আর কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ওইসব দরিদ্র পরিবার। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, এবার বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ফারুয়া ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের সাড়ে ১২০০ পরিবার। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিঃস্ব হয়েছে ফরুয়া বাজারসহ ১৫৪টি পরিবার। এ ছাড়া ছয়টি বাজারের মধ্যে ফারুয়া, একুজ্জ্যছড়ি, ওরাছড়ি, তক্তানালা, উলুছড়ি ও ছাইন্দ্যা বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউনিয়নের একমাত্র বৃহত্তম ফারুয়া বাজারটি। বানের জলে ভেসে গেছে বাজার ব্যবসায়ীদের দোকানঘর, মালামাল। এ ছাড়া ৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাড়া কেন্দ্র, মসজিদ, মন্দির ও গির্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ঘরবাড়ি থেকে বিদ্যালয়গুলো এখনো কাদামাটিতে ভরপুর। তাই বন্ধ রয়েছে বেশ কিছু বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। স্থানীয় বলেন, ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল বিলাইছড়ি ফারুয়া। মিজোরাম রাজ্যের পর্বত শ্রেণি থেকে উৎপত্তি রাইন খেং নদী। এ নদী মিলিত হয়েছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে। তাই প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় ফারুয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। ফারুয়া বাজারের ব্যবসায়ী থোই মাচিং মারমা (৫০) জানান, টানা বৃষ্টিপাতের সময় হঠাৎ বৃদ্ধি পায় হ্রদের পানি। মুহূর্তেই ডুবে যায়  দোকানসহ মালামাল। মালামাল সরানোর সময়টুকু পাইনি। সব ভেসে গেছে। একই অভিজ্ঞতার কথা জানায় ৬৬ বৎসর বয়সী সত্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি বলেন, এ বয়সে দুইটি পাহাড়ি ঢল দেখেছি। একটি ১৯৭৪ সালে, অন্যটি ২০২৩ সালের এ বন্যা। যা আসলেই ভয়াবহ ছিল। আমাদের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন নিঃস্ব সবাই। যুমানছড়ি বমপাড়ার হেডম্যান পালোম বম জানান, এ পাড়ার ১৮০টি পরিবারের মধ্যে ৪৮টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, পাড়া কেন্দ্রসহ অনেক প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে গেছে। ফারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, টানা বৃষ্টিতে বন্যায় ঘরবাড়ি ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, সড়ক ও ফসলি জমি মাছের ঘের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যা আসলে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। বিলাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা জানান, বন্যার পরবর্তী ৫০ মেট্রিক টন চাল পেয়েছি। তার মধ্যে ফারুয়ায় ৩০ মেট্রিক টন দিয়েছি। যা খাদ্যশস্য পেয়েছি, তা পর্যাপ্ত নয়। কারণ তাদের ঘরবাড়ি ও প্রচুর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। তার পরও স্থানীয় এমপি, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর