বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টাউন খাল বর্জ্যরে ভাগাড়

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টাউন খাল বর্জ্যরে ভাগাড়

রক্ষণাবেক্ষণ আর অবহেলায় প্রায় বিলীনের পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী টাউন খাল। তিতাস নদ থেকে উৎপত্তি হওয়া ৪.৮ কিলোমিটারের টাউন খালকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল এই শহরের প্রাচীন বাণিজ্যিক কেন্দ্র। অথচ সেই খালই এখন অস্তিত্ব হারিয়ে বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন অংশে কচুরিপানা জমে খালে পানির দেখা মিলে না। বছরের পর বছর পার হলেও খালটি রক্ষায় পুনঃখনন বা সুপরিকল্পিত উদ্যোগ না নেওয়ায় খালের বেশিরভাগ অংশ ভরাট হয়ে গেছে। আর যাও অবশিষ্ট রয়েছে তাতেও বর্জ্য ফেলে ভরাট হওয়ার পথে। আর এতে করে এক শ্রেণির অবৈধ দখলদাররা সুযোগ বুঝে নানাভাবে খালের বিভিন্ন অংশ দখলে নিয়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, দখল দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসা খালটিকে রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। তাদের মতে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ না নেওয়ায় স্বরূপে ফিরছে না তিতাস নদের এই খাল। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালটিকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও  নানামুখী পরিকল্পানা রয়েছে। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, টাউন খালে এক সময় ছিল পানির প্রবল প্রবাহ। তিতাস নদের কান্দিপাড়া থেকে গোকর্ণঘাট পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করা খালটি দিয়ে এক সময় বড় বড় পাল তোলা নৌকায় করে ঢাকা, ভৈরব, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করা হতো। আর এর স্বচ্ছ জলরাশি ছিলো মাছ ধরা থেকে শুরু করে শিশু-কিশোরদের হৈ-হুল্লোড় আর সাঁতরে বেড়ানোর আদর্শ স্থান। গৃহস্থালির নিত্যদিনের কাজও করা হতো এই খালের পানিতে। কিন্তু এখন সবই অতীত। তিতাস নদের কান্দিপাড়া পয়েন্ট থেকে খালটির উৎপত্তি। শহরের পানি নিষ্কাশনে খালটি ভূমিকা রাখলেও তা নিয়ে কারও কোনো চিন্তা নেই। খালের দুই পাশে থাকা বিভিন্ন বাড়ি ঘরের বর্জ্য, বিভিন্ন দোকান, মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁ, হাসপাতালের বর্জ্য ফেলার জায়গা হয়ে উঠেছে ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলা খালটিতে। ঘুটঘুটে কালো পানি আর চারপাশ ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধে যেন নাভিশ্বাস। পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও কেন খালটির করুণ দশা। খালের বিভিন্ন অংশ অবৈধ দখলে চলে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বিচারে বর্জ্য ফেলায় দিনের পর দিন সরু হয়ে পড়ছে। এতে করে ভারী বর্ষা মৌসুমেও এই খালে তেমন পানি থাকছে না। মাটির পলি জমে ভরাট হয়ে থাকা খালটির স্বাভাবিক পানি প্রবাহিত না হওয়ায় পানি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। আর এতে হচ্ছে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে জীব-বৈচিত্র্যের ওপর। স্থানীয়রা জানান, মানুষের অসচেতনতা আর নগর পরিকল্পনাবিদদের উদাসীনতায় খালটি প্রায় হারিয়েই গেছে। খালটিতে পানি নেই, বিভিন্ন জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। আর দখলদাররা রয়েছেই। খালটি ভরাট হতে হতে উচু হয়ে যাওয়ায় তিতাস নদের যে পয়েন্ট থেকে খালের উৎপত্তি সেই পয়েন্টে ওয়াটার লেভেল সমন্বয় হচ্ছে না। এতে খালে পানির প্রবাহ নেই। তাই খালটিকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনলে ঐতিহ্যবাহী খালটি আবারও পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে।

সর্বশেষ খবর