বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পদ্মায় অবৈধ ড্রেজিং

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

পদ্মায় অবৈধ ড্রেজিং

বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার নামে দীর্ঘদিন ধরে পদ্মায় চলছে অবৈধ ড্রেজিং। ভাঙন আতঙ্কে দিঘিরপাড় বাজারসহ শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পদ্মা নদীতে প্রকাশ্যে এমন ড্রেজিং চললেও এক প্রকার ঘুমিয়ে আছে প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, ভাঙন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের নাম করে দীর্ঘদিন ধরে ডাম্পিং স্থানের ১০০ গজের মধ্যেই চলছে অবৈধ ড্রেজিং। প্রকাশ্যে এমন ঘটনা চলছে মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুরের সীমান্তবর্তী টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় ইউনিয়নের পদ্মা নদীর সরিষাবন এলাকায়। শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ সীমানা এলাকায় এমন ড্রেজিং কার্যক্রম চললেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না দুই জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ ড্রেজিংয়ের সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় প্রশাসনকে কোনোরূপ পাত্তা না দিয়েই চালানো হচ্ছে ড্রেজিং। এতে প্রতিদিন শতাধিক বাল্কহেড লোডিং করে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী চক্রটি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শাহপরান ড্রেজিং প্রকল্প নামে একটি লোডিং কাটারের মাধ্যমে অবৈধভাবে ড্রেজিং করে একের পর এক বাল্কহেড ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জিও ব্যাগ ডাম্পিং স্থানসহ বিক্রির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জায়গায়। এ ছাড়া জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের ১০০ গজের মধ্যেই ড্রেজিংয়ের ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে ঐতিহ্যবাহী দিঘিরপাড় বাজারসহ পদ্মার চরের কৃষিজমি ও গ্রামে গ্রামে। এতে আতঙ্কে রয়েছে আশপাশের শত শত বসতবাড়ি, কৃষিজমিসহ দিঘিরপাড় বাজারের শত শত ব্যবসায়ী। জানা গেছে, পদ্মার ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তবে জিও ব্যাগের ভিতরে যে বালু দেওয়া হচ্ছে এসব বালু দিয়ে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। কারণ জিও ব্যাগে মোটা বালু দেওয়ার কথা থাকলেও অবৈধভাবে ড্রেজিং করে পদ্মার চিকন বালু যা পাউডার নামে পরিচিত তা দিয়ে চলছে জিও ব্যাগ ভর্তি করে ভাঙন রোধে ডাম্পিং কাজ। কোনোরকম মৌখিক অনুমোদন নিয়েই চলছে এমন অবৈধ ড্রেজিং। এতে প্রতিদিন পদ্মা থেকে লাখ লাখ ঘন মিটার বালু উত্তোলন করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ড্রেজিংয়ের সঙ্গে জড়িতরা। স্থানীয়রা জানান, অন্যত্র থেকে বালু কিনে জিও ব্যাগ ভর্তি করার কথা থাকলেও জিও ব্যাগের নাম করে অবৈধভাবে কোনোরূপ অনুমোদন ছাড়াই জিও ব্যাগ ডাম্পিং স্থানের ১০০ গজের মধ্যে ড্রেজিং চালিয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। এ ছাড়া ড্রেজিংয়ে জড়িত ড্রেজারটিরও নেই অনুমোদন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছে না। ফলে তাদের ইচ্ছামতো লোডিং ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ ঘন মিটার বালু উত্তোলন করে নিচ্ছে চক্রটি। এতে পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। হুমকিতে পড়েছে মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দিঘিরপাড় বাজার ও পদ্মার চরের শত শত একর কৃষিজমি, বসতবাড়ি। অনতিবিলম্বে এ অবৈধ ড্রেজিং বন্ধ না করতে পারলে জিও ব্যাগ ফেলে কোনো কাজেই আসবে না। বরং এই বর্ষায় ভাঙনের তীব্রতা ব্যাপক আকার ধারণ করবে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের। ড্রেজার সুকানি মহসিন জানান, টোকেন হাতে পাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন ১৯-২০টি বাল্কহেড লোড দিতে পারেন তারা। এর মধ্যে কতটা জিও ব্যাগের আর কতটা বাইরে যায় তা তার জানা নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি বাল্কহেডের আলাদা টোকেন অনুযায়ী লোড দিয়ে থাকি।’ জিও ব্যাগ ডাম্পিং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নবারুণ ট্রেডার্সের সাইড অফিসার মোহাম্মদ রুবেল হোসেন বলেন, ‘আমরা শুধু জিও ব্যাগে বালু ভর্তি করে ভাঙনকবলিত এলাকার ডাম্পিং করে যাচ্ছি। তবে বালু কোথা থেকে এলো তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ, তারাই জানে ড্রেজিংয়ের বিষয়টির অনুমোদন আছে কি না।’ তবে অবৈধভাবে ড্রেজিংয়ের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত ড্রেজার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর