শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

গ্রামীণ সড়কে বদলে যাচ্ছে পাবনার কৃষি অর্থনীতি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বাড়ছে উপস্থিতি

পাবনা প্রতিনিধি

গ্রামীণ সড়কে বদলে যাচ্ছে পাবনার কৃষি অর্থনীতি

চাটমোহরে চলনবিলের ওপর দিয়ে নির্মিত সাবমারসিবল রাস্তা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাবনা সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের কৃষি নির্ভর গ্রাম ঘোড়াদহ। চরের সুফলা জমিতে ফসল ভালো হলেও, সড়কের বেহাল দশায় পরিবহনে ছিল ভোগান্তি। শুষ্ক মৌসুমে ধুলার পাহাড়, আর বর্ষার কাদাজল পেরিয়ে ফসল ঘরে আনতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হতো চাষিদের। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসানের কারণে অনেক সময় উৎপাদিত ফসল নষ্ট হয়েছে মাঠেই। তবে এখন বদলে গেছে দৃশ্যপট। এক সময় যে পথে ঘোড়া কিংবা মহিষের গাড়ি চলাই দুঃসাধ্য ছিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন পাবনার মাধ্যমে সেখানে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে সাবমারসিবল পাকা সড়ক। যা নিজেদের জন্য আশীর্বাদ মনে করছেন স্থানীয়রা। ঘোড়াদহের মতো একই ইউনিয়নের পীরপুর, দড়িভাউডাঙা, বলরামপুর সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের চোমড়পুর, লোহাগাড়া, স্বরূপপুর, শ্রীকোল, দড়ি শ্রীকোল, হাপানিয়া, লক্ষ্মীকোল, চরপাড়া, চর হাপানিয়া ও চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ডাকাতের ভিটাসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো বদলে দিয়েছে পাবনার কৃষি অর্থনীতি। চরাঞ্চলে পাকা সড়ক, নদী খালবিলের মাঝে সাবমারসিবল সড়কে কমেছে কৃষিপণ্য পরিহনে ভোগান্তি ও খরচ। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে আয় বেড়েছে প্রান্তিক চাষিদেরও। স্থানীয়রা বলছেন, প্রত্যন্ত গ্রামে সাবমারসিবল সড়কে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এসেছে গতি। উৎপাদিত পণ্য সরাসরি শহরের বাজারে নিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষক, জেলে। ভ্যান, রিকশা চালিয়ে জীবিকার পথ খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বাড়ছে উপস্থিতি। এ ব্যাপারে সদর উপজেলার ভাঁড়ারা শিবের বটতলা এলাকার আবদুল হক প্রামাণিক বলেন, আশপাশে সাত-আট গ্রামের সবাই খেত খামার (কৃষি) করে খায়। ধান, গম, মশুর ও পাটের পাশাপাশি জমিতে লাউ, ঝিঙে, ঢেঁড়স, বেগুনসহ নানারকম শাকসবজি চাষ করি। রাস্তাঘাট না থাকায় বাজারে নিতে পারতাম না। ফলে কম দামে বিক্রি করতে হতো। রাস্তাটি হওয়ায় এখন আমরা বাজারে নিতে পারব, ভালো দাম পাব। পীরপুরের বাসিন্দা ওসমান আলী খাঁ বলেন, বৃষ্টি কাদায় ছেলে-মেয়েরা আগে স্কুলে যেতে চাইত না। ধরে বেঁধে স্কুলে পাঠাতে হতো। তাছাড়া রাস্তাঘাট না থাকায় আমাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে নিয়েও সমস্যা হতো, অনেকেই এ এলাকার মেয়েদের বিয়ে দিত না। পাকারাস্তা হওয়ায় এখন আর সেই সমস্যা থাকবে না। ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান বলেন, এসব এলাকার কৃষকদের মাঠ থেকে এক গাড়ি (ঘোড়া বা মহিষের গাড়ি) ফসল আনতে আগে ৩০০ টাকার মতো খরচ হতো। এখন সেই ফসল ১০ থেকে ২০ টাকার মধ্যেই উঠে আসবে। সহজেই বাজারে নিয়ে বেশি দামে বিক্রিও করতে পারবে। সব মিলিয়ে এ সড়কের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষ দারুণ উপকৃত হবেন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ জানান, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, কর্মসংস্থান ও জীবিকা অর্জনের সুযোগ বেড়েছে। এতে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছে মানুষ। সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, ২০১৮ সালে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল গ্রাম হবে শহর। সেই লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে পাকা সড়ক নির্মাণের মধ্য দিয়ে তাদের আধুনিক নাগরিকসেবা নিশ্চিত করছে। এতে গ্রামাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি বদলে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর