রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যাটারি পোড়ানো কারখানায় সর্বনাশ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

ব্যাটারি পোড়ানো কারখানায় সর্বনাশ

গেটে তালা ঝুলছে। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই ভিতরে কী হচ্ছে। টিনের বেড়া সরিয়ে ভিতরে গিয়ে দেখা মিলেছে বড় দুটি চুল্লির। দিনে সুনসান নিরবতা থাকলে রাতে জ্বলে চুল্লির আগুন। এখানেই পোড়ানো হয় ব্যাটারি। অবৈধ ব্যাটারি পোড়ানোর এ কারখানাটি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের খয়রত গ্রামে পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে। গতকাল কারখানায় গিয়ে দেখা মিলে দুজন শ্রমিকের। আইয়ুব ও বিল্লাল নামে দুজন শ্রমিক সার্বক্ষণিক কাজ করেন কারখানাটিতে। তাদের বাড়ি গাইবান্ধায়। আইয়ুব জানান, মালিক রাতের বেলায় আসেন। তিনি আসার পরই ব্যাটারি পোড়ানো শুরু হয়। এলাকাবাসী জানায়, যানবাহনের পুরনো ব্যাটারি এনে কারখানাটিতে রাতে পুড়িয়ে বের করা হয় সিসা। পরে ব্যাটারির ভাঙা অংশ ও এসিড ফেলা হয় আশপাশের এলাকা এবং জলাশয়ে। এর প্রভাবে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। কারখানা সংলগ্ন জলাশয়ের বিষাক্ত পানি পান করে দুই মাসে অন্তত ১০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা। এ ছাড়া অনেকের গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। গুণধর ইউনিয়ন স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের এস এম মাসুম জানান, প্রায় সাত মাস আগে ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানা স্থাপন করেন জনৈক মুসা মিয়া। দিনে কারখানা বন্ধ রাখলেও রাতে পোড়ানো হয় ব্যাটারি। এ থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ মাটিও পানিতে মিশছে। পাশাপাশি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পরিবেশ। সংগঠনের আহ্বায়ক হেদায়েত উল্লাহ জানান, কারখানাটির পাশে একটি মাদরাসা রয়েছে। আবাসিক শিক্ষার্থী এবং এলাকার অনেকে ব্যাটারি পোড়ানোর ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সংগঠনের সদস্য সচিব আবু সজিব জানান, দুই মাস আগে করিমগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কারখানাটি সিলগালা করে জরিমানাও করেন। এর কয়েক দিন পর আবার চালু করে ব্যাটারি পোড়ানো হচ্ছে। কিশোরগঞ্জ জেলা পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল জানান, ব্যাটারি পোড়ানোর অবৈধ কারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ মাটি, পানি ও বাতাসের ক্ষতি করছে। সর্বনাশ ডেকে আনছে পরিবেশের। কারখানাটি বন্ধের দাবিতে গতকাল গুণধর ইউনিয়ন স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের উদ্যোগে মানববন্ধন হয়েছে। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে কারখানা বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, প্রশাসন জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে এলাকাবাসীই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন। কারখানা মালিক মুসা মিয়া মোবাইল ফোনে জানান, খয়রত এলাকার আজিজুল ইসলামের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে তিনি কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েক দিন ধরে এটি বন্ধ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা বেগম সাথী জানান, দেড় মাস আগে কারখানাটি সিলগালা করে মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের জানা মতে কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। আবার চালু হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর