সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভরা মৌসুমেও হাওরে মিলছে না মাছ

পোনা নিধন নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা

জাকারিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ

ভরা মৌসুমেও হাওরে মিলছে না মাছ

দিনভর হাওরে জাল ফেলে সন্ধ্যায় প্রায় শূন্য হাতে ফিরছেন জেলেরা -বাংলাদেশ প্রতিদি

চলছে বর্ষার ভরা মৌসুম। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, লাখাই ও বানিয়াচং উপজেলাসহ ভাটি অঞ্চলের হাওরগুলোতে থই থই করছে পানি। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই পানি আর পানি। তবু হাওরে দেশি মাছের তীব্র সংকট। জেলেদের জালে পর্যাপ্ত মাছ ধরা না পড়ায় বাজারে চাহিদাও বেড়েছে কয়েকগুণ। যে কারণে ক্রেতাদের দেশি প্রজাতির মাছ কিনতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এ ছাড়া বিলুপ্তির পথে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ। একটা সময় যারা মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন সেই জেলে পল্লী বাসিন্দাদেরও এখন নেই সুসময়। বাধ্য হয়েই অনেকে পেশা বদল করছেন। হবিগঞ্জের ১৮ লাখের বেশি মানুষের বাস। জেলার সীমান্ত এলাকাজুড়ে রয়েছে বিশাল বিশাল হাওর। বর্ষাকালে এখানকার অধিকাংশ মানুষের প্রধান কাজ মাছ শিকার বা চাষ করা। একটা সময় এখানকার মিঠা পানির মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হতো ইউরোপ, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে নিজ জেলার বাসিন্দাদেরই চাহিদা মিটছে না দেশি মাছের। জানা যায়, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই ও বানিয়াচং উপজেলা হাওরবেষ্টিত। হাওরাঞ্চল হওয়ায় বর্ষায় পানিতে টুইটুম্বর হয়ে যায় চারদিক। একদিকে বর্ষার পানি অন্যদিকে করাঙ্গী, বরাক, ভেড়ামোহনা, সুটকী, রত্না, বিজনা, খোয়াই, কুশিয়ারা, ঝিংড়ী, সুতাংসহ বিভিন্ন নদ-নদী বয়ে গেছে এ জেলার ওপর দিয়ে। যে কারণে দেশি মাছের প্রাচুর্য ছিল একটা সময়। হাওরে ধরা পড়ত প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শৈল, গজার, শিং, পাবদা, রুই, কাতল, চিতল, টেংরা, চিংড়ি, বোয়াল, বাউস, আইড়, টাকি, বাইন, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতি মাছ। জেলেদের জালে এখন আর আগের মতো সেই সুস্বাদু মাছ আর ধরা পড়ছে না। এ ছাড়া বিলুপ্তির পথে রয়েছে রানী, কাকিয়া, চাপিলা, খালিশা, গুতুমসহ কিছু প্রজাতি। হাওরাঞ্চলে জেলেরা জানান, দেশি প্রজাতির মাছ কমার পেছনে নানা কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পোনা মাছ নিধন এবং পুকুর-জলাশয় সেচের পর মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা। জেলেরা জানান, মাছ বড় হওয়ার সময় এক শ্রেণির জেলে হাওরের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দিয়ে পোনা মাছ নিধন করে বিক্রি করে দেন। এ ছাড়া নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, বের জাল ও চাইনিজ বিভিন্ন জাল ব্যবহারের কারণে হাওরে দেশি মাছের সংকট দেখা দিচ্ছে। এসব জাল ব্যবহারে মা মাছ মারা যাচ্ছে। হাওরে দেশি মাছের প্রজনন বাড়াতে মৎস্য অধিদফতরকে আরও কঠোরভাবে মনিটরিং এবং বেশি বেশি পোনা অবমুক্ত করার দাবি জানান জেলেরা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার জানান, আমাদের দেশি মাছ সংকটের জন্য আমরাই দায়ী। অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার ও প্রজননের সময় মাছ শিকার এবং নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের কারণেই দিন দিন দেশি মাছ কমছে। তিনি বলেন, হাওরে মাছ বৃদ্ধির লক্ষ্যে পোনা মাছ অবমুক্তসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। নিয়মিত অভিযান চলবে।

সর্বশেষ খবর