বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চাষে যন্ত্র ব্যবহারে কমছে খরচ

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

চাষে যন্ত্র ব্যবহারে কমছে খরচ

কম্বাইন হার্ভেস্টারে ধান মাড়াই -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নবীপুর। এখানের জমি মাঝারি উঁচু। বোরো, আউশ ও আমন তিন মৌসুমে ধান আবাদ হয়। চারা রোপণের সময় নারীদের কষ্ট কম হলেও মাড়াইয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। পায়ে চাপা মেশিন বা হাতে পিটিয়ে ধান বের করতে হয়। এ সময় রাত-দিন কাজ করতে হয়। ধুলাবালিতে একাকার হয়ে যায়। রান্না-গোসল থেকে সন্তানের যত্ন কিছুই করা হয়ে ওঠে না। তবে এখন কম্বাইন হার্ভেস্টারে ধান মাড়াই করায় অনেক কম পরিশ্রম করতে হচ্ছে নারীদের। ধানের জমিতে থাকা মেশিন থেকে বস্তায় ধান নিয়ে নিতে পারছেন কৃষক। ওই গ্রামের কিষানি সালমা বেগম ও মাজেদা খাতুন বলেন, ‘চোখের নিমিশে একপাশ দিয়ে ধান কাটা, অন্য পাশে গরগর শব্দে বস্তায় ধান ঢুকছে। দেশে জাদুর মিশিন আইছে। আমরার কষ্টও কমছে।’

নবীপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম প্রবাসে ছিলেন। দেশে ফিরে নিজের জমি চাষ করেন। তার একটি ধান লাগানোর রাইস ট্রান্সপ্লান্টার রয়েছে। তিনি ট্রেতে চারা লাগান। ট্রেতে থাকা চারা মেশিনে লাগানোয় চাষে সময় কম লাগে। জমিতে তিন ফসলের স্থলে সরিষাসহ চার ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রথম দিকে যখন মেশিনে ধান লাগাতে যেতাম, অনেকে হা করে তাকিয়ে থাকতেন। কেউ কেউ মেশিন ছুঁয়েও দেখতেন। কুমিল্লা সদর উপজেলার যশপুর গ্রামের আবদুল খালেক। তার হার্ভেস্টার রয়েছে। তিনি বলেন, এক একর জমির ধান কেটে মাড়াই করতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। খরচ লাগে ৭ হাজার টাকা। সেখানে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটলে একদিন সময় লাগে, খরচ লাগে ১৪ হাজার টাকা। তিনি বলেন, পাশের শিমপুর, পান্ডানগর, শিমড়া, বামইল ও শ্রীপুরের দুই-তৃতীয়াংশ জমি মেশিনের মাধ্যমে কাটা হয়। এতে কৃষকের অর্ধেক খরচ কমে গেছে। কমেছে পরিশ্রম। রোধ হয়েছে ১৫ ভাগ ধানের অপচয়। সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প সূত্র জানায়, উপকূলীয় ও হাওড় এলাকায় ৭০ ভাগ ও অন্য এলাকায় ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে ১২ ক্যাটাগরির যন্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশে প্রায় ৩৪ হাজার যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কুমিল্লায় ৫৬টি হার্ভেস্টারসহ ৯৬টি যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লায় দীর্ঘদিন কাজ করেছি।

এখানের কৃষক আধুনিক। কুমিল্লায় দিন দিন কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। ৩ বছর আগে দেশে মেশিনে ৪ ভাগ ধান কাটা হতো। বর্তমানে তা ১৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে। আমরা আশা করছি ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জমি যান্ত্রিকভাবে চাষাবাদের আওতায় আসবে।

সর্বশেষ খবর