রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রাথমিকেই ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

বেহাল গাইবান্ধার চরাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রাথমিকেই ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড । কথায় আছে- যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। নদনদীর জেলা গাইবান্ধার চরাঞ্চলে ১১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সে তুলনায় মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসা নেই বললেই চলে। প্রাথমিকের গন্ডি পেরোতেই ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ঝরে পড়ছে অকালে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে জেলার সামগ্রিক শিক্ষা ও আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর। আবার অনেকেই বাধ্য হয়ে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ছে। কেউ-বা বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনায় জেগে ওঠা ছোট-বড় ১৬৫টি চর-দ্বীপচর রয়েছে। সেখানে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে নগণ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ও কথিত ভাড়াটে শিক্ষক দিয়ে। মাধ্যমিক পর্যায়ের পর্যাপ্ত স্কুল না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় পাস করার পর ঝরে পড়ছে বেশির ভাগ শিশু। এদের মধ্যে ছেলেরা নিয়োজিত হচ্ছে কৃষিকাজে, মেয়েরা শিকার হচ্ছে বাল্যবিয়ের। জেলার চরাঞ্চলে প্রায় ৪ লাখ মানুষের বসবাস। নদী তীরবর্তী তিনটি মাদরাসা, চারটি নিম্নমাধ্যমিক ও পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বেশির ভাগ চরেই নেই কোনো মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।  গাইবান্ধা সদরের ব্রহ্মপুত্রের চরকাবিলপুর চরের বাসিন্দা হারুন অর রশীদ পড়েন গাইবান্ধা সরকারি কলেজে। তিনি জানান, ওই চর থেকে গত বছর ২৩ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করেছে। এর মধ্যে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছে নয়জন। মূল ভূখন্ড উপজেলা কিংবা জেলা শহরে পড়তে হলে অনেক দূর যেতে হয়। অনেকেই হাইস্কুলে ভর্তি হলেও মাঝপথে ঝরে পড়ে যোগাযোগব্যবস্থা ও আবাসন সংকটে।

মমেনা খাতুন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী গুনভরি উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এক বছর পড়ার পর যাতায়াত সমস্যায় আর স্কৃলমুখো হয়নি। সে জানায়, তার সঙ্গী হাসনা, রেখা ও তাহেরা পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর কেউ আর স্কুলে যায় না। নদী পার হয়ে একা স্কুলে যেতে ভয় লাগে তার। চরকাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাব্বি হাসান জানায়, পড়ালেখা করার অনেক ইচ্ছা আছে। কিন্তু এ চরে হাইস্কুল নেই। তাই বাধ্য হয়ে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করতে হয় তাকে।  কালাসোনা চরে তিন সন্তানের জনক হবিবুর রহমান (৬০)। তার দুই ছেলে কামাল ও জামাল। তারা পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর আর স্কুলে যেতে পারেনি। এখন কৃষি কাজে জড়িয়ে পড়েছে। মানবাধিকার কর্মী আবদুল কাদের ভূঁইয়া আকাশ বলেন, দুর্গম চরে যাতায়াত একটি বড় সমস্যা। মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ নেই। চরগুলো প্রায় নদীভাঙনের কবলে পড়ে। চরগুলোয় অস্থায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হলে ওইসব এলাকার ছাত্রছাত্রীদের অকালে ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করা যেত। জেলা শিক্ষা অফিসার রোকসানা বেগম বলেন, চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে জেলা শিক্ষা অফিস। শতভাগ উপবৃত্তিসহ চরাঞ্চলে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর