মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এক যুগেও

আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এক যুগেও

পূর্ণাঙ্গ নৌবন্দর ঘোষণার পর এক যুগেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। দেশের পূর্বাঞ্চলের এ নৌবন্দরটি দেশের অন্যান্য নৌবন্দরের তুলনায় অবকাঠামোগত দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১০ সালে আশুগঞ্জ নৌবন্দরকে পোর্ট অব কল থেকে নৌবন্দর ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য মালামাল পরিবহন করা হয় এ বন্দর দিয়ে। ভারত এ বন্দর ব্যবহার করে কয়েক দফায় ভারি লৌহজাত পণ্য, খাদ্যশস্য পরিবহন করে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে আসছে। প্রতি মাসে রড, সিমেন্ট, পাথর, সার, ধান, গমসহ বিভিন্ন পণ্যবোঝাই ছোট-বড় শতাধিক কার্গো জাহাজ আসে এ নদীবন্দরে। নৌবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পর্যাপ্ত জেটির অভাবে পণ্য আনলোডে অতিরিক্ত সময় লাগে। এতে জাহাজ মালিকদের যেমন অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়, তেমনি বন্দরে অবস্থানকালীন বার্থিং ফিও দিতে হয়। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন ব্যবসায়ীরা। নৌবন্দরের ব্যবসায়ী আলমগীর মিয়া বলেন, পণ্য পরিবহনে আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহারে চাহিদা বাড়লেও বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনো হয়নি। বর্তমানে বন্দরে মাত্র দুটি জেটি রয়েছে। অথচ একেকটি জাহাজ থেকে পণ্য আনলোডে সময় লাগে চার-পাঁচ দিন। একটি জাহাজের পণ্য আনলোড না হওয়া পর্যন্ত অন্য জাহাজগুলোকে বন্দরেই নোঙর করে থাকতে হয়। এতে নদীতে প্রায়ই জাহাজের জটলা সৃষ্টি হয়। মূলত জেটির স্বল্পতার কারণেই সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন লোড-আনলোডের জন্য বন্দরে কমপক্ষে আরও পাঁচটি জেটি নির্মাণ করা প্রয়োজন। জেটি সংখ্যা বাড়লে বন্দরে বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ জাহাজ আসবে। ব্যবসায়ী মো. নাসির মিয়া বলেন, প্রতিষ্ঠার পর এক যুগ হয়ে গেলেও নৌবন্দরের কাক্সিক্ষত অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। জেটি স্বল্পতায় নির্ধারিত সময়ে জাহাজ থেকে পণ্য আনলোড করা যায় না। বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকের জন্য একটি ট্রাকইয়ার্ড প্রয়োজন। ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, নৌবন্দরে কোনো ওয়ার হাউস না থাকায় সারসহ বিভিন্ন পণ্য খোলা আকাশের নিচে রাখতে হয়। ট্রাক ইয়ার্ড না থাকায় লোড-আনলোডের পর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় ট্রাকগুলো এলোপাতাড়ি রাখা হয়। বন্দরে ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তিনি বলেন, আশুগঞ্জ নৌবন্দরটি আধুনিকীকরণ করা হলে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য থেকে আমদানি-রপ্তানি জোরদারসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। বিআইডব্লিওটিএ সূত্র জানায়, বন্দরের সমস্যা লাঘবে ভারতীয় নমনীয় ঋণে ১২০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে সাড়ে ৩২ একর জমির ওপর আধুনিকমানের নৌবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিওটিএ ভৈরব-আশুগঞ্জ নৌবন্দর উপপরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, আশুগঞ্জ নৌবন্দর আধুনিকীকরণে প্রথম দফার দরপত্র সফল না হওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। এটি ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের কাছে পুনরায় পাঠানো হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রাথমিক পর্যায়ে নৌবন্দর নির্মাণ কার্যক্রম এগিয়েছে। বিশেষ করে ভূমি অধিগ্রহণ করে তারা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আধুনিকমানের বন্দর নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। প্রয়োজনীয় দরদাতা না পাওয়ায় দরপত্রটি বাতিল করা হয়। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে সম্মতি পাওয়ার পর আবারও দরপত্র আহ্বান করা হবে।

সর্বশেষ খবর