চারপাশে সবুজ বিস্তৃত ধান খেত। তার মাঝ দিয়ে যাওয়া প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়কের দুই ধারে সারি সারি তালগাছ। সেখানেই বসেছে তাল পিঠার মেলা। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙ্গা তালতলীতে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে তিনদিনের এই তালপিঠা উৎসব। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এই মেলা উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার। মেলা ঘুরে দেখা যায়, বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেই নানা প্রান্তে থেকে মেলায় এসেছেন হাজারো মানুষ। দর্শনার্থীরা সারি সারি তালগাছের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি পিঠার স্বাদ নিতে মেতে উঠেছেন। মেলায় ১০টির বেশি স্টলে তালের তৈরি নানান ধরনের পিঠার পসরা সাজিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এসব স্টলে তালের তৈরি ফুলঝরি, জামাই পিঠা, খেজুর পিঠা, তাল জিলাপি, তাল কেক, তালক্ষীর, মুইঠা পিঠা, গড়গড়া, তালরুটি, কানমুচুরি, ডাল বড়াসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ধরনের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। এসব পিঠার দাম প্রতিটি ১০ থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত। সেখানে বাড়ি থেকে বানিয়ে আনা পিঠার পাশাপাশি কোনো কোনো স্টলে পিঠা তৈরি করতেও দেখা গেছে। পরিবার নিয়ে নওগাঁ সদর থেকে এ উৎসবে আসা গোলাম রাব্বানী বলেন, এই সড়কের ছবি ফেসবুকে অনেক দেখেছি। কখনো সচক্ষে দেখা হয়নি। ইচ্ছে ছিল আসব। এর মধ্যে শুনলাম তাল পিঠা মেলার কথা। এজন্য পরিবার নিয়ে দেখতে এলাম। তাল গাছের এমন সারি পাশাপাশি মেলাতে বিভিন্ন রকম তালের পিঠা দেখলাম, খেয়ে স্বাদ নিলাম। মান্দা থেকে আসা সুলতানা জেসমিন বলেন, আমরা কয়েকজন এই মেলা দেখতে এসেছি। তাল দিয়ে বানানো অনেক রকম পিঠে দেখলাম, যা আগে কখনো দেখিনি। বাড়ি গিয়ে আমিও তাল দিয়ে পিঠে বানাব, যেগুলো আগে কখনো খাওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর আয়োজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে আশির দশকে হাজিনগর-ঘুঘুডাঙা দুই কিলোমিটার সড়কজুড়ে এই তালগাছ আমি লাগিয়েছিলাম। সে সময় অনেকে পাগলও বলেছিল। এখন সে সব তালগাছ বড় হয়ে সড়কটি সৌন্দর্যময় করে তুলেছে। দেশে বিদেশে পরিচিত পেয়েছে। তাল সড়ককে কেন্দ্র করে ঘুঘুডাঙ্গা একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। কিছু কাজ করা হয়েছে। বিশেষ অতিথি ছিলেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস। অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমতিয়াজ মোরশেদ সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক প্রমুখ।