শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পিঁয়াজ চাষ সারা বছরই

বাড়ল দুটি মৌসুম, সংকট কাটানোর চেষ্টা

জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া

পিঁয়াজ চাষ সারা বছরই

জেলায় প্রণোদনার মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশি পদ্ধতিতে পিঁয়াজ সংরক্ষণে মাচাঘর নির্মাণকাজ চলছে। বছরে দুটির জায়গায় পিঁয়াজ চাষে চারটি মৌসুম তৈরি করা হচ্ছে। সারা বছরই পিঁয়াজ উঠতে থাকছে, বাড়ছে উৎপাদন। এতে সংকট দূর হওয়ার পাশাপাশি দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে পিঁয়াজের চাহিদার কথা ভেবে সংকট মোকাবিলায় আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি বিপণন অধিদফতর। দেশের পাঁচ জেলায় পিঁয়াজ বেশি হয়, তার একটি কুষ্টিয়া। সবশেষ শীতকালীন মৌসুমে এখানে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, ‘আগে যেখানে বছরে দুবার পিঁয়াজ চাষ হতো, এখন চারবার চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রণোদনা ও লাভ পেয়ে কৃষক দিন দিন গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘মুড়িকাটা (ছোট পিঁয়াজ থেকে পিঁয়াজ) পিঁয়াজ ঘরে ওঠে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। শীতকালীন (দানা থেকে চারা) পিঁয়াজ ওঠে মার্চে। এ দুটি মৌসুমেই আগে পিঁয়াজ উৎপাদন করত কৃষক। নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ। এর জন্য আনা হয়েছে উচ্চফলনশীল জাতও। দুই দফায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে এ মৌসুম। প্রথম দফায় কুষ্টিয়া জেলায় ১ হাজার ২০০ কৃষককে ১ বিঘা জমির জন্য ১ কেজি বীজ, ৪০ কেজি সার ও খরচ বাবদ ২ হাজার ৮০০ করে টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ পিঁয়াজ এখন উঠতে শুরু করেছে। অক্টোবরজুড়েই এটি ঘরে উঠবে। গ্রীষ্মকালীন অন্য মৌসুমটির চাষ শুরু হচ্ছে অক্টোবরে। এ সময়ও একই সংখ্যক কৃষককে একই রকমের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ পিঁয়াজ উঠবে আগামী ডিসেম্বরে মুড়িকাটা পিঁয়াজের আগে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জেলায় নতুন দুই মৌসুমে এবার পিঁয়াজ চাষ অনেক সম্প্রসারণ হয়েছে।

সারা বছর পিঁয়াজ ওঠায় কৃষক ভালো দাম পাবেন। আর ঘাটতি মেটাবে জাতীয় চাহিদার।’ তিনি আশা করেন গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে, পিঁয়াজের সব সংকট কেটে যাবে।

এ পরিস্থিতিতে দেশে উৎপাদিত পিঁয়াজ দিয়েই দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে পিঁয়াজের পচন ঠেকানো। তাই দেশি পদ্ধতিতে পিঁয়াজ সংরক্ষণের মাচাঘর নির্মাণ করছে সরকার। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ১৫ কৃষকের বাড়িতে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ করে মাচাঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। তিন স্তরের একেকটি মাচাঘরে ২৫০ থেকে ৩০০ মণ করে পিঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ করা যাবে। ইতোমধ্যে এসব ঘরের পিলার পর্যন্ত হয়ে গেছে। এখন অ্যাঙ্গেল ও টিন বসানোর কাজ চলছে। কুমারখালীর ছাতিয়ান গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মাচাঘরে পিঁয়াজ রাখতে পারলে আর পচার টেনশন থাকবে না। যখন ভালো দাম পাবও তখন বেচতে পারব।’

কুষ্টিয়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, ‘দুই মাসের মধ্যে এসব ঘর কৃষককে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা গেলে যে পিঁয়াজ নষ্ট হতো তা বাঁচিয়েই দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। মোকাবিলা করা যাবে পিঁয়াজবাজারের অস্থিরতাও। প্রথম পর্যায়ে এসব ঘরে সফলতা এলে পর্যায়ক্রমে আরও ঘর তৈরি করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘এসব ঘরে থাকা রেজিস্টারের মাধ্যমে সরকার পিঁয়াজের মজুদ সম্পর্কেও ধারণা পাবে।’

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা অডিটোরিয়ামে ৩০ সেপ্টেম্বর মাচাঘরে পিঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ এবং বিপণন নিয়ে কৃষি উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেলার চাষি, ব্যবসায়ী, কৃষি উদ্যোক্তাসহ ৬০ জন এতে অংশ নেন। ৩ অক্টোবর জেলা কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ সমন্বয় কমিটির সভায়ও পিঁয়াজ চাষ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়।

সরকার খুচরা পর্যায়ে ৬৪-৬৫ টাকা পিঁয়াজের কেজি নির্ধারণ করে দিলেও কুষ্টিয়ায় গতকাল বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা দরে। কৃষক এখন ৬০ থেকে ৬২ টাকা দরে বেচতে পারছেন। সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান জানান, ‘ভারত শুল্ক আরোপ করায় পিঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তবে কেউ বেশি লাভ করছেন কি না দেখতে নিয়মিত বাজার তদারক করা হচ্ছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর