রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পরিত্যক্ত ৫ কোটির হিমাগার

নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি, সুবিধাবঞ্চিত স্থানীয় সবজিচাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

পরিত্যক্ত ৫ কোটির হিমাগার

যশোরে সবজি ও ফল সংরক্ষণে বিএডিসির বিশেষায়িত সবজি হিমাগার ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সমন্বিত মানসম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে যশোর শহরের ঝুমঝুমপুরে বিএডিসি উদ্যানে এটি নির্মাণ করা হয়। চারটি চেম্বারে ৫০ টন ধারণ ক্ষমতার হিমাগারটিতে সবজি ও ফলের পাশাপাশি মাছ, মাংসও সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে যশোর জেলা সবজি জোন হিসেবে খ্যাত। শীত, গ্রীষ্মসহ সারা বছর এ জেলায় ২০ থেকে ২২ ধরনের সবজি উৎপাদন হয়। এখানে বছরে প্রায় ৬ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও রফতানি হচ্ছে এখানকার সবজি। ভরা মৌসুমে সবজি উৎপাদন যখন অনেক বেশি হয়, তখন দাম অনেক কমে যায়। এ কারণে চাষিরা উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে দীর্ঘদিন ধরে সবজি সংরক্ষণের জন্য বিশেষায়িত হিমাগার নির্মাণের দাবি করে আসছিলেন চাষিরা। যার প্রেক্ষিতে সরকার এটি নির্মাণ করে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে হিমাগারটি। সবখানে ধুলাবালু আর মাকড়শার জাল। উদ্বোধনের পরই এতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা যায়। একদিনের জন্যও এটি চালু হয়নি। পড়ে থাকতে থাকতে এর অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় সবজি চাষি, বিএডিসি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে হিমাগার চালু না হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান না থাকা, সংরক্ষণ ভাড়া মাত্রাতিরিক্ত হওয়া, কৃষি জোন থেকে এর দূরত্ব অনেক বেশি হওয়া, প্রচারণার অভাব। সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের চাষি মোহাম্মদ বাশার বলেন, ‘যশোরে আলু রাখার জন্য ১০/১২টি হিমাগার আছে জানি, কিন্তু সবজি সংরক্ষণের হিমাগার আছে, তা তো জানি না’। বারিনগরের চাষি জামিল শেখ বলেন, ‘সাতমাইল আড়ৎ থেকে হিমাগারের দুরত্ব ১৫ কিলোমিটার। এটি নির্মাণের সময় স্থান নির্বাচন ও পরিকল্পনা সঠিক হয়নি। এটি কৃষকের কোনো কাজেই আসছে না’। তারা বলেন, ২৫ টাকার সবজি এক সপ্তাহ হিমাগারে রাখতে ২০/২৫ টাকা খরচ, এর সঙ্গে আরও ১০ টাকা পরিবহণ খরচ। এটা কোনভাবেই চাষীদের জন্য লাভজনক না। সবজি হিমাগারটির স্টোর কিপার জাহিদ হাসান বলেন, এটি পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২২ জন লোক প্রয়োজন। আছে মাত্র ৬ জন। যশোরের ঝুমঝুমপুর বিএডিসি উদ্যানের মার্কেটিং সুপারভাইজার বলরম সরকার বলেন, অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় হিমাগারটির অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে বসেছে, কিছু ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।’ বিএডিসি বীজ বিপণন খুলনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক একেএম কামরুজ্জামান বলেন, চাষীদের কথা চিন্তা করেই হিমাগারটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু জনবল সংকটসহ নানা কারণে এটি চালু করা সম্ভব হয়নি।

তিনি জানান, চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, পরিবহণ ব্যয় ও সংরক্ষণ খরচ বেশি হওয়ায় তারা এ হিমাগারে সবজি রাখতে অনিহা প্রকাশ করছেন। জনবল চেয়ে ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তাছাড়া, কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে হিমাগারে সংরক্ষণ খরচ বিএডিসি বহন করলে সবজি চাষিদের অনেক উপকার হবে। এ ব্যাপারেও চেষ্টা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর