শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কর্মচঞ্চল চলনবিলের শুঁটকিপল্লী

শতাধিক চাতালে কাজ করেন সহাস্রাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক

পাবনা প্রতিনিধি

কর্মচঞ্চল চলনবিলের শুঁটকিপল্লী

দেশের বৃহত্তম মৎস্যভান্ডার খ্যাত চলনবিলের পাড়ে মাছ শুকানোয় ব্যস্ত সময় পার করছে জেলেরা। এলাকাবাসী জানায়, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত উপজেলাগুলোয় নদনদী, খালবিলের পানি নেমে যাচ্ছে। কিছু এলাকার খালবিল প্রায় শুকিয়ে গেছে। পানি কমায় জেলেদের জালে এখন বেশি মাছ ধরা পড়ছে। ফলে মাছ শুকানো শুরু করেছে মৌসুমি শুঁটকি ব্যবসায়ী ও জেলেরা। সকাল থেকে রাত অবধি মাছ কেনা, ধোয়া, চাতালে শুকানো ও বাছাই করে পৃথক করার কাজ করছে নারী-পুরুষ শ্রমিকরা। চলনবিলের মাঝ দিয়ে নির্মিত বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে চলাচলের সময় যে-কারও নাকে ভেসে আসবে শুঁটকি মাছের গন্ধ। পাবনার চাটমোহর উপজেলার বোয়াইলমারী, সোনাহারপাড়া; ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার, ফরিদপুর উপজেলার খাগড়বাড়িয়া; সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি, উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিরী মোহনপুর; নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া, হালতী, আত্রাইয়ে মাছ শুকাচ্ছেন মৌসুমি শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলনবিল এলাকায় উল্লেখযোগ্য ৪৮টি বিল, ১৪টি খাল ও ১১টি নদনদী রয়েছে। কিছু বিলের পানি স্লুইস গেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। স্লুইস গেট না থাকায় কিছু বিলের পানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। যেসব বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রকৃতিনির্ভর, সেসব বিলের পানি অনেক কমে গেছে। এসব বিলে এখন বেশি মাছ ধরা পড়ছে। প্রতি বছর ভাদ্র মাসে সীমিত আকারে মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয় চলনবিল এলাকায়। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মাছের জোগান। এ বছর আশ্বিনে কিছু এলাকায় মাছ শুকানো শুরু হয়েছে। তবে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তারা আশা করছেন, অগ্রহায়ণ পর্যন্ত পুরোদমে চলবে মাছ শুকানোর কাজ। মাছের পরিমাণ কমে গেলেও এ এলাকায় শতাধিক শুঁটকি চাতাল বসেছে এ বছর। সেসব চাতালে নারী-পুরুষ মিলে সহস্রাধিক শুঁটকিশ্রমিক মাছ শুকানোর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছাইকোলা এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, কয়েক দিন হলো মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয়েছে। মহিষলুটি মাছের আড়তে বর্তমান পুঁটি ও চাঁদা মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচা পুঁটি ও চাঁদা ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শুঁটকি মাছ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়। চাটমোহর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল মতিন জানান, প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বরে চলনবিল এলাকায় প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। যেসব মাছ দ্রুত পচনশীল সেগুলো যাচ্ছে শুঁটকি চাতালে। পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলনবিলকেন্দ্রিক শুঁটকি মাছ বিক্রয় কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার নির্মিত হলে এ এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।

 

সর্বশেষ খবর