মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অপেক্ষার অবসান হচ্ছে কুষ্টিয়াবাসীর

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাবে দুই ট্রেন

জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া

অপেক্ষার অবসান হচ্ছে কুষ্টিয়াবাসীর

অবশেষে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে কুষ্টিয়াবাসীর। কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে পদ্মা সেতু পেরিয়ে ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার শিডিউল করেছে রেলওয়ে। আপাতত দুটি এক্সপ্রেস ট্রেন এ রুটে ঢাকা-খুলনা আসা-যাওয়া করবে। আগামীকাল সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং পরদিন বেনাপোল এক্সপ্রেস কুষ্টিয়া শহরের ওপর দিয়ে যাতায়াত শুরু করবে। রেলওয়ে পশ্চিমের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. আবদুল আওয়াল স্বাক্ষরিত দফতরাদেশে এ খবর জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১ নভেম্বর খুলনা থেকে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস আর সিরাজগঞ্জ যমুনা সেতু হয়ে যাবে না। রুট পরিবর্তন করে পোড়াদহ জংশন থেকে এটি কুষ্টিয়া শহরের ওপর দিয়ে রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে উঠবে পদ্মা সেতুতে। এর পর থেকে এ পথেই যাতায়াত করবে ট্রেন। ট্রেনটি রাত সোয়া ১টায় কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে পৌঁছাবে। কুষ্টিয়ার মানুষ মাত্র ৪ থেকে সোয়া ৪ ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছে যাবেন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের বুকিং ইনচার্জ সাইদুজ্জামান। তিনি বলেন, ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে শোভন চেয়ার ৩৫০ আর এসি চেয়ার ৫৮০ টাকা। ঢাকা থেকে ফিরতি ট্রেন ছাড়বে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে, কুষ্টিয়া পৌঁছাবে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে। দফতরাদেশে আরও বলা হয়েছে, ২ নভেম্বর দুপুর ১টায় যশোরের বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেসও কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে এ রুটে চলাচল করবে। এ ট্রেন কুষ্টিয়া এসে পৌঁছাবে বিকাল ৫টায়। ঢাকা পৌঁছাবে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। ফিরতি ট্রেন ঢাকা থেকে ছাড়বে রাত পৌনে ১২টায়, কুষ্টিয়ায় পৌঁছাবে রাত সাড়ে ৩টার দিকে। বুকিং ইনচার্জ সাইদুজ্জামান বলেন, কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের জন্য সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ৪০টি শোভন চেয়ার ও ২০টি এসি সিট বরাদ্দ হয়েছে। এ ছাড়া বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য ৩০টি শোভন চেয়ার ও ১০টি এসি আসন রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, টিকিট দিতে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনকে অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ দুটি ট্রেন রুট পরিবর্তন করে চলাচল শুরু হলে কুষ্টিয়াবাসীর অন্তত ২ ঘণ্টা সময় কম লাগবে, খরচও কমে আসবে।

আগে পোড়াদহ জংশন থেকে ট্রেনে ঢাকা যেতে লাগত ৬ ঘণ্টার মতো। কুষ্টিয়া শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে পোড়াদহ যেতে আলাদা খরচ হতো। আর নন-এসি বাসে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা যেতে ভাড়া নেওয়া হয় ৫৫০ টাকা। সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মতো। এ কারণেই পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার খবরে আনন্দিত কুষ্টিয়ার মানুষ। এ পথে ঢাকা যাওয়ার অপেক্ষায় তারা। বলছেন, এতে সূচনা হবে নতুন দিগন্তের।

কুষ্টিয়ায় মানুষকে রেলপথে ঢাকা যেতে হলে শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের পোড়াদহ জংশনে যেতে হয়। সেখান থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পেরিয়ে সিরাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ট্রেনে ঢাকা যেতে পাড়ি দিতে প্রায় ২২০ কিলোমিটার। সময় লেগে যায় ৬-৭ ঘণ্টা। নতুন রুটে কুষ্টিয়া শহর হয়ে ঢাকার দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটারের মতো।

কুষ্টিয়ার বাসিন্দা এসআই সুমন বলেন, এভাবে যেতে পারলে রাতে গিয়ে দিনে কাজ শেষে আবার রাতে ফিরে আসা যাবে। হোটেল খরচ বেঁচে যাবে। সময়ও বাঁচবে অনেক। ব্যবসায়ী শরীফুল ইসলাম বলেন, সকালের দিকে কুষ্টিয়া থেকে ট্রেন ছাড়তে পারলে আরও ভালো হতো। তার পরও যে সুযোগ সৃষ্টি হলো তাতে ব্যবসাবাণিজ্যে গতিশীলতা আসবে। খুলে যাবে নতুন দিগন্ত। কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, আরও একটি ট্রেন রাজশাহী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করে। নাম মধুমতী এক্সপ্রেস। এ ট্রেনটিও সরাসরি পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ঢাকা নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এটি চালু হলে সকালে ঢাকা যাওয়ার ট্রেন পাবে কুষ্টিয়ার মানুষ। এতে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।

সর্বশেষ খবর