রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

চরম ভোগান্তিতে মুন্সীগঞ্জের অবহেলিত আট গ্রামের মানুষ

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

রজত রেখা নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো -বাংলাদেশ প্রতিদিন

স্বাধীনতার ৫২ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি অবহেলিত আটটি গ্রাম। ঝড় তুফান কিংবা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলা সদরে যোগাযোগে এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। রোগী বা অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের চিকিৎসা নিতে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। এ ছাড়া গ্রামগুলোয় উৎপাদন করা কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পড়তে হচ্ছে নানা জটিলতায়। সরেজমিন দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লা কান্দি ইউনিয়নের ঢালিকান্দি, গাবুয়া ঢালিকান্দি, মোল্লাবাড়ি, লক্ষিদিবি, কংসপুরা, খাসমোল্লাকান্দি, নোয়াদ্ধা গ্রামের মানুষ একপ্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব গ্রাম থেকে বের হওয়ার একমাত্র ভরসা রজত রেখা নদী ও দুই খালে বাঁশের সাঁকো। গ্রামগুলোর ভিতরেও সব সড়ক কাঁচা। সেখানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি বেসরকারি বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা রয়েছে। কোমলমতি শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রজত রেখা নদীর ওপর দিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় স্কুল, মাদরাসা বা কলেজে। প্রতি তিন মাস পর পর প্রবাসীদের পাঠানো আর্থিক সহযোগিতা ও গ্রামের প্রতিটি ঘর থেকে তোলা টাকা দিয়ে সংস্কার করা হয় সাঁকোগুলো। অভিযোগ রয়েছে জাতীয় সংসদ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এলে নেতারা গ্রামগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে নির্বাচন শেষে কেউ প্রতিশ্রুতি রক্ষায় এগিয়ে আসেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, স্বাধীনতার এত বছরেও আমরা সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমাদের অবহেলিত এসব গ্রাম থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তা নেই। নির্বাচন এলে প্রার্থীরা শুধু প্রতিশ্রুতি দেন কাজের কাজ কেউ করেন না। স্থানীয় বাসিন্দা বিল্লাল গাজী বলেন, রজত রেখা নদীর ওপর দিয়ে একটি ব্রিজ ও শনিবাড়ি সংলগ্ন একটি খালের ওপর একটি কালভার্ট নির্মাণ হলে এসব গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ কমে যেত।

আজিজ মোল্লা নামের এক বাসিন্দা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার না থাকায় একপ্রকার জিম্মি হয়ে আছি। কেউ অসুস্থ হলে বা গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি না। কারণ ঝুঁকি নিয়ে বড়বড় বাঁশের সাঁকো পার হয়ে চিকিৎসা নিতে যাওয়া আর যুদ্ধ জয় করা একই কথা। স্থানীয় এক নারী জানান, ছোট ছোট শিশুদের স্কুলে বা কোথাও পাঠাতে পারি না। এ সাঁকোর জন্য সব সময় সন্তানদের নিয়ে চরম আতঙ্কে থাকতে হয়। এর আগেও একাধিকবার এ সাঁকো থেকে শিশু ও বৃদ্ধরা পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। তাই বাঁশের সাঁকোগুলো অপসারণ করে স্থায়ী পাকা সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ হলে আমাদের কষ্ট কমে আসবে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. রিপন পাটোয়ারী বলেন, আমি লিখিতভাবে সরকারের বিভিন্ন দফতরে অবহেলিত গ্রামগুলোর বিষয় তুলে ধরেছি। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে মানুষের ভোগান্তি কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিফা খান।

সর্বশেষ খবর