বুধবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শত কোটি টাকার গুড় উৎপাদনের লক্ষ্য

নাটোরে খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি

নাটোর প্রতিনিধি

শত কোটি টাকার গুড় উৎপাদনের লক্ষ্য

চলছে হেমন্তকাল। শীত মৌসুম আসতে এখনো কিছুদিন বাকি। এরই মধ্যে নাটোরের গ্রামাঞ্চলে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। শুরু হয়েছে গাছিদের খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। পাশাপাশি খেজুর গাছ পরিচর্যা-পরিষ্কারসহ রস সংগ্রহের উপযোগী করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। আর মাত্র কয়েকদিন পরই পাওয়া যাবে কাক্সিক্ষত খেজুর রস। গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক উৎসব শুরু হবে খেজুরের মিষ্টি রস ঘিরে। শীত মৌসুমজুড়ে চলবে সুস্বাদু বিভিন্ন ধরনের পিঠা উৎসব। শীতের মৌসুমে খেজুরের রস ও গুড়সহ পিঠা খেতে শহর থেকে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে আসেন অনেকেই। শীতের সকালের রৌদ্রে খেজুরের রস ও মুড়ি খাওয়ার আসর বসে বাড়ির আঙিনায়। শীত মৌসুমে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে উৎসব মুখর পরিবেশে খেজুরের গুড় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরির আয়োজন করা হয়। নাটোরের সব উপজেলাতেই খেজুর গাছ আছে। তবে লালপুরে খেজুরের গাছ ও গুড় উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। এরপরই রয়েছে বড়াইগ্রাম। সম্প্রতি বড়াইগ্রামে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিকারী অর্ধশতাধিক গাছিকে নিয়ে কর্মশালা হয়েছে। লালপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দশটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা অঞ্চলে সড়ক ও রেললাইনের দুই পাশে, জমির আইল, বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে আছে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ খেজুর গাছ। এসব গাছ থেকে গুড় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৭৯ মেট্রিক টন। খেজুর গাছের রস সংগ্রহের ওপর প্রায় ৩ হাজার পরিবার নির্ভরশীল। নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, জেলায় খেজুর গাছ রয়েছে ৬ লাখ ২৭ হাজার ৭৯০টি। এর মধ্যে রস সংগ্রহের উপযোগী গাছ রয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬২২টি। শীত মৌসুমে ৭৫ দিনে প্রতিটি গাছ থেকে ১৭৪ কেজি রস পাওয়া যায়। আর প্রতিটি গাছের রসে গুড় উৎপাদন হয় ১৭ দশমিক ৪০ কেজি। জেলায় প্রতি মৌসুমে গড়ে প্রায় ৯ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন (৯৬ লাখ ২৩ হাজার ৮৬২ কেজি) খেজুর গুড় উৎপাদন হয়। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি বছর নাটোর জেলায় ১০৫ কোটি টাকার খেজুর গুড় উৎপাদন ও বাজারজাত হয়। গত মৌসুমে শত কোটি টাকার খেজুর গুড় উৎপাদন হয়েছে। প্রতিদিন একজন গাছি ৫০ থেকে ৫৫টি খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকেন। শীত মৌসুমে ৭০ থেকে ৭৫ দিনে একটি খেজুর গাছ থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি গুড় পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া খেজুরের পাতা দিয়ে মাদুর তৈরিসহ খেজুরের গাছ কেটে ঘরের তীর তৈরি করা হয়। উপজেলা পর্যায়ের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জেলার লালপুর উপজেলায় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫০০টি খেজুর গাছে প্রতি বছর গুড় উৎপাদন হয় প্রায় ৫ হাজার ৭৯ মেট্রিক টন, বড়াইগ্রাম উপজেলায় ১ লাখ ৬ হাজার গাছে গুড় উৎপাদন হয় ১ হাজার ৭১১ মেট্রিক টন, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৭৫ হাজার ৯৪০ খেজুর গাছে গুড় উৎপাদন হয় ১ হাজার ৩২ মেট্রিক টন, সদর উপজেলায় ৪৪ হাজার গাছে ৫৯৮ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গা উপজেলায় ৬ হাজার গাছে ৯১ দশমিক ৮ মেট্রিক টন, সিংড়া উপজেলায় ৬০ হাজার গাছে ৭৬৫ মেট্রিন টন ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় ২১ হাজার ৩৫০টি গাছে গুড় উৎপাদন হয় ৩৪৪ মেট্রিক টন। জেলায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ খেজুরের রস ও গুড় উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল। নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবদুল ওয়াদুদ বলেন, নিরাপদ গুড় উৎপাদন, সঠিকভাবে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে এ খাত লাভজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।

সর্বশেষ খবর