রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বেহাল দশায় মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র

অযত্ন অবহেলা ভিতরে চলছে কবুতর পালন

দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী

বেহাল দশায় মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতিকেন্দ্র -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে অযত্ন, অবহেলায় বেহাল দশা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল বিষাদ সিন্ধু, জমিদার দর্পণসহ অসংখ্য বইয়ের কালজয়ী লেখক ও নাট্যকার মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রের। ২০০১ সালের ১৯ এপ্রিল শেখ হাসিনা স্মৃতি কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এক একর ৮৪ শতাংশ জমির ওপরে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় স্মৃতি কেন্দ্রটি। লোকবল সংকট, কেন্দ্রটির ভিতরে যেখানে সেখানে ময়লার স্তূপ, সাহিত্যপ্রেমীদের বসার স্থানের সংকটসহ নানা কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সাহিত্যপ্রেমী মানুষ ও দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থীরা না আসায় সেখানে করা হয়েছে সবজির বাগান ও কবুতর পালনের ব্যবস্থা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, স্মৃতি কেন্দ্রের সংগ্রহশালায় কোনো নিদর্শন নেই। আটটি পদের বিপরীতে পাঁচজন কাজ করছেন। কয়েক বছরে কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। মূল ভবনে ফাটল, সীমানাপ্রাচীর হেলে পড়া, দর্শনার্থীদের বসার বেঞ্চ নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে স্মৃতি কেন্দ্রের ভিতরে করা হয়েছে সবজির বাগান ও কবুতর পালনের ব্যবস্থা। মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো দর্শনার্থী নেই। ১৩ নভেম্বর মীর মশাররফ হোসেনের জন্মদিন উপলক্ষে কোনো সাজশয্যা করা হয়নি। মূল ফটক থেকে সামনে গেলে দেখা যায় লাউ খেত। কবুতরের বিষ্ঠা মীর মশাররফ হোসেনের ভাস্কর্য নষ্ট করে ফেলেছে। যেখানে সেখানে কবুতরের বিষ্ঠায় নষ্ট হয়েছে স্মৃতি কেন্দ্রের পরিবেশ। প্রবেশপথে মীর মশাররফ হোসেনের লেখা বইগুলোর নাম থাকলেও সেগুলো দেখা যায়নি। মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদের সভাপতি সুজয় কুমার পাল বলেন, দুই যুগে স্মৃতি কেন্দ্রটিতে দর্শনার্থী ও সাহিত্যপ্রেমীরা আসে না- এটা আমাদের জন্য কষ্টের। তিনি প্রশ্ন করেন, মানুষ এখানে কেন আসবেন? এখানে বসার জায়গা নেই, ইন্টারনেট নেই, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো না। তিনি বলেন, মানুষ সরাসরি বইয়ের দিকে যাবে এ ধারণা এখন ভুল। শিক্ষার্থীরা যেন স্মৃতি কেন্দ্রে আসেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুরা যেন এখানে আনন্দের জন্য এসে শেষপ্রান্তে বইয়ের সন্ধান পান। সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেও হয়তো কিছু শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থী বইয়ের সন্ধান পাবেন। তবে বাংলা একাডেমির সমন্বয়হীনতা রয়েছে এখানে। বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বলেন, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমির ব্যর্থতা রয়েছে এখানে। আমরা এখানে উন্নয়ন করতে চাইলে তারা বাধা দেয়। অথচ তারাও উন্নয়ন করে না। বর্তমানে সেভাবে দর্শনার্থী ও পর্যটক আসেন না। এভাবে থাকলে স্মৃতি কেন্দ্রটি নষ্ট হয়ে যাবে। বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ভালো একটি জায়গায় মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছিল। অবকাঠামোগত কোনো সমস্যা ছিল না। বর্তমানে লোকবল সংকটের কারণে সমস্যা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করব। উল্লেখ্য, ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর মীর মশাররফ হোসেন কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে।

সর্বশেষ খবর