সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চালু হচ্ছে কুষমেক বহির্বিভাগ

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে উদ্বোধন করবেন কাল

জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া

চালু হচ্ছে কুষমেক বহির্বিভাগ

অবশেষে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ (কুষমেক) হাসপাতালে বহির্বিভাগের একটি অংশ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বারবার সময় বাড়িয়ে দীর্ঘ ১১ বছরেও শেষ হয়নি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্পের কাজ। নির্মাণকাজের ধীরগতিতে পড়ে রয়েছে শতকোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম। বারবার ব্যয় বাড়িয়ে সরকারের মোটা অঙ্কের অর্থ গচ্চা গেছে এ প্রকল্পে। কুষ্টিয়া অঞ্চলের ছয় জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১২-১৩ অর্থবছরে। এটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ সময় নির্ধারণ হয়েছে। ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হলেও বর্তমানে এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮২ কোটি টাকা। তবে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের পাশে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ২০২১ সাল থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সাত তলাবিশিষ্ট ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির এখনো অনেক কাজ বাকি। তাই কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে এর বহির্বিভাগের একটি অংশ চালু করার। জুন মাস থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত কয়েকবার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণের পর অবশেষে ১৪ নভেম্বর চূড়ান্ত হয়েছে উদ্বোধনের তারিখ। এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকে নানা জটিলতা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে শ্রমিকের মৃত্যু হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইএমইডি শক্তিশালী তদন্ত দল কুষ্টিয়া এসে তদন্তে নানা অনিয়ম দেখতে পায়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া গাইডলাইন মোতাবেক এখানে কাজ হয়েছে। ছয়টি ব্লকের হাসপাতাল চত্বরের কাজ প্রায় শেষের দিকে বললেন বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, গত অক্টোবরে হাসপাতালের বহির্বিভাগ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি অংশের কাজ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এদিকে ২০১৪ সালের দরপত্রে প্রায় ৭০ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় করা হয়। বিদেশ থেকে আমদানি করা এসব এমআরআই, সিটিস্ক্যান, অত্যাধুনিক সিআর্ম এক্সরে এবং জীবাণুমুক্তকরণ অটোক্লেভ মেশিনসহ ওয়ার্ড ও কেবিনের শয্যা, ১৬টি অপারেশন থিয়েটার, সিসিইউ-আইসিইউসহ বিভিন্ন বিভাগের সরঞ্জাম জায়গা মতো বসানো যায়নি। প্রায় শতকোটি টাকার মালামাল বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোর অফিসার মুশফিকুর রহমান বলেন, সার্ভে করার পর এসব মালামাল আমার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেসব কক্ষে এসব বসানো হবে তা এখনো প্রস্তুত না হওয়ায় মালামালগুলো ওভাবেই পড়ে আছে।

এর মধ্যেও অপারেশনের কাঁচিসহ কিছু মালামাল যে দেশের দেওয়ার কথা তা না দেওয়ায় ফেরত দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ঠিকাদাররা শিডিউল মোতাবেক সঠিক মাল দিয়ে গেছেন।

প্রকল্পের কাজে বিলম্ব ও দুর্নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ কুষ্টিয়া অঞ্চলের মানুষ। কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম টুকু এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন। তিনি বলেন, যত বিলম্ব করবে ততই কুষ্টিয়া অঞ্চলের মানুষ আধুনিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।

একই কথা বলেছেন ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার সরকার। তিনি বলেন, এখানে গাদাগাদি পরিবেশে রোগীদের সঠিক সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু হলে এই চাপ কিছুটা কমবে। রোগীদের আর রাজশাহী বা ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করার দরকার হবে না। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মাহবুবুর রহমান খান বলেন, মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্র্যাকটিকেলের জন্য জেনারেল হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. চৌধুরী সরওয়ার জাহান বলেন, ১৪ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এই হাসপাতালের বহির্বিভাগ উদ্বোধন করবেন। তিনি বলেন, এরপরই আমরা আউটডোরের একটি পার্ট চালু করে দেব। বাকি পাটের ভবন এখনো হস্তান্তর করেনি গণপূর্ত বিভাগ। এটিও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে, আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা টার্গেট নির্ধারণ করেছি এখানে প্রতিদিন ৪ হাজার মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার। শুরুতেই আমরা চিকিৎসা ও ওষুধ দিতে পারব। ডায়াগনোসিসের জন্য আরও কিছুটা সময় লাগবে। টেকনিক্যাল সাপোর্ট ও দক্ষ জনবল নেওয়া হয়ে গেলে আমরা সব ধরনের চিকিৎসা দিতে পারব। আধুনিক সব সরঞ্জাম ইতোমধ্যে আনা হয়েছে।

উদ্বোধনের আগে গতকাল কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ঘুরে দেখেছেন। এ উপলক্ষে পরীক্ষামূলকভাবে রোগী দেখা শুরু করেন চিকিৎসকরা।

সর্বশেষ খবর