বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পরিত্যক্ত লাইনে জমির ভাড়া গুনছে রেলওয়ে

পাওনা দাবিতে ঘুরছেন শত শত কৃষক

সাইফুল মিলন, গাইবান্ধা

পরিত্যক্ত লাইনে জমির ভাড়া গুনছে রেলওয়ে

গাইবান্ধায় পরিত্যক্ত রেললাইন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাইবান্ধায় ভাড়া পরিশোধের শর্তে জমি অস্থায়ী হুকুমদখল করে স্থাপন করা হয়েছিল রেলপথ। প্রথম ১৩ বছরে ভাড়া পরিশোধ করা হয়। এরপর ১৩ বছর ধরে ভাড়া বকেয়া রেখেছে রেল বিভাগ। পাওনার জন্য প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শত শত জমিমালিক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিত্যক্ত লাইন অপসারণ না করে জমি ভাড়ার বোঝা বাড়াচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ১০ বছরেই রেলের কাছে জমির ভাড়া বাবদ ৬ শতাধিক কৃষকের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা।

রেলওয়ে সূত্র জানান, ১৯৯৬-৯৭ সালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ৬২৯ কৃষকের কাছ থেকে ভাড়া পরিশোধের শর্তে ১৪৫ দশমিক ৭৩ একর জমি অস্থায়ী হুকুমদখল করে স্থাপন করা হয় ত্রিমোহিনী স্টেশন থেকে বালাসীঘাট পর্যন্ত নতুন সাড়ে ৮ কিলোমিটার রেলপথ। প্রথম ১৩ বছরে ভাড়া বাবদ প্রায় ৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা হলেও এর পর থেকে ১৩ বছর ধরে তা বকেয়া রয়েছে। সূত্র আরও জানান, ১৯৩৮ সালে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলে রেল যোগাযোগ স্থাপনে ব্রিটিশ সরকার গাইবান্ধার ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদে রেলফেরি সার্ভিস চালু করে। তখন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন থেকে ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়। ১৯৯৭ সালে নদের নাব্য সংকটে গাইবান্ধা অংশে ফেরি সার্ভিসটি ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ওই উপজেলার বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ত্রিমোহিনী স্টেশন থেকে বালাসীঘাট পর্যন্ত নতুন করে রেলপথ নির্মাণ করা হয়।

বালাসীঘাট চালুর পরপরই ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় বঙ্গবন্ধু সেতু। এর পরই বালাসীঘাটের গুরুত্ব কমতে শুরু করে। ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য সংকটে ২০১৬ সাল থেকে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে রেলওয়ের ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে তিস্তামুখ ফেরিঘাটও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এভাবে যাত্রীপারাপার-ব্যবস্থার ইতি টানা হলে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর বাসিন্দারা যমুনার পূর্বপাড়ের জামালপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও শেরপুরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এরপর মালবাহী ট্রেনও বন্ধ হয়ে যায়। বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে রেলওয়ে ফেরির সঙ্গে বন্ধ হয় রেল চলাচলও। তবে রেললাইন অপসারণ না করে জমি ফেলে রেখে ভাড়ার বোঝা বাড়াচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এদিকে পাওনা আদায়ের জন্য প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন জমিমালিকরা।

বালাসীঘাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের পরিবারের বসতভিটাসহ প্রায় ৩ একর কৃষিজমি রেল অধিগ্রহণ করেছে। ১২-১৩ বছর ধরে ভাড়া পাই না। এতে ভাড়া বাবদ আমরা রেলওয়ের কাছে ৫০-৬০ লাখ টাকা পাব।’ আরেক ভুক্তভোগী মৃত আকবর হোসেনের স্ত্রী ছায়বান বেওয়া আক্ষেপ করে বলেন, রেলওয়ে ট্যাকাও দেয় না, জমিও ছাড়ে না।’ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের বালাসীঘাট থেকে সদর উপজেলার ত্রিমোহিনী রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার রেললাইনের ওপর গড়ে উঠেছে শতাধিক বসতবাড়ি। মাটি সরে গিয়ে কোথাও আবার ঝুলে আছে রেললাইন। নাট-বল্টু, স্লিপারসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশের হদিস নেই অনেক জায়গায়। রেলপথজুড়ে চোখে পড়েনি একটি পাথরও। শর্তানুযায়ী, হুকুমদখল করা জমির জন্য কৃষকের পাওনা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পরিশোধের কথা রেলওয়ের। এ কাজে সহযোগিতা করবে জেলা কৃষি বিভাগ। তারা প্রতি বছর ত্রিমোহিনী-বালাসী রেলের জমিতে ফসলের মূল্যমান নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসনকে রিপোর্ট দেবে। জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ত্রিমোহিনী-বালাসী রেলে দখল করা জমির মালিকদের দেওয়ার জন্য তিন বছরের জন্য ভাড়া বাবদ প্রায় দেড় কোটি টাকা প্রাক্কলন করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে তা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। রেলওয়ের রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) মো. আসাদুল হক জানান, ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত যে টাকাটা তারা পায়, তার বাজেট দেওয়া হয়েছে। দু-এক মাসের মধ্যে রেল অপসারণ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর