শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশকে স্বপ্নভঙ্গ

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশকে স্বপ্নভঙ্গ

মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশকে স্বপ্নভঙ্গ

বাগেরহাটে মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশক ব্যবহার করায় নষ্ট হয়েছে কৃষকদের শত শত একর আমন ধান খেত। সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের হেদায়েতপুর বিলের কৃষকরা এই ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, তারা কেউ ব্যাংক থেকে, কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমন ধান আবাদ করেছেন। এ আমন ধানই তাদের একমাত্র ভরসা। এ থেকে সারা বছরের খাবার ছাড়াও ধান বিক্রি করে দায়দেনাসহ সব ধরনের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন কৃষকরা। তারা নিজের জমি ছাড়াও বর্গা বা লিজ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু এ বছর স্থানীয় ডিলারের দেওয়া মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশক ব্যবহার করে নষ্ট হয়ে গেছে তাদের ধান। কৃষকরা আরও জানান, বীজতলা থেকে জমিতে চারা লাগানোর পর তারা সন্তানের মতো যত্ন করেছেন ধান খেত। ধানে ফলন আসার আগেই জমিতে লেদা ও পারলি পোকা আক্রমণ করে। এর প্রতিষেধক হিসেবে তারা ডেমা ইউনিয়নে বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার অমিও এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আকুঞ্জি করিম হোসেনের কাছ থেকে ‘সিনজেনটা’ কোম্পানির ‘ভিরতাকো’ নামে একটি কীটনাশক ক্রয় করে ব্যবহার করেন। কিন্তু এই কীটনাশক ব্যবহার করে কোনো উপকার হয়নি তাদের। চোখের সামনেই শেষ হয়ে গেছে তাদের স্বপ্ন। পরে তাদের ব্যবহার করা কীটনাশকের প্যাকেটের গায়ে দেখতে পান এর মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন দিশাহারা তারা। কৃষক গাজী বাবর আলী জানান, তিনি ৬০ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন। প্রথমদিকে ধান খুবই ভালো ছিল। লেদা পোকায় আক্রমণ করলে তিনি কাশিমপুর বাজারের করিমের কাছ থেকে ‘ভিরতাকো’ নামে কীটনাশক ক্রয় করে ব্যবহার করেন। পরপর চারবার দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে প্যাকেটের গায়ে দেখেন কীটনাশকের মেয়াদ নেই। কৃষক লোকমান শেখ জানান, তিনি লিজ নিয়ে দুই একর জমিতে আমন চাষ করেছেন। এর জন্য তিনি বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশকের কারণে সব শেষ হয়ে গেছে। কৃষক নজরুল ইসলাম, ইব্রাহিম মোল্লা, শেখ জিল্লুর রহমান জানান, আমন ধানই তাদের একমাত্র ভরসা ছিল। তারা সবাই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। কিন্তু ডিলার করিমের কাছ থেকে নেওয়া মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশক তাদের শেষ করে দিয়েছে। তারা এই ডিলারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কীটনাশক ডিলার অমিও এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আকুঞ্জি করিম হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমি মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশক বিক্রয় করিনি।’ বাগেরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তন্ময় দত্ত বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশক বিক্রয় করা অপরাধ। বিষয়টি জানার পরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। কীটনাশক ডিলারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর