শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য সংকট

সাইফুল মিলন, গাইবান্ধা

ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য সংকট

ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য সংকটে গাইবান্ধার বালাসী থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। অতিরিক্ত সময়ের পাশাপাশি নদী পারাপারে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এ রুটে উত্তরাঞ্চলের আট জেলার লাখ লাখ মানুষ নিয়মিত চলাচল করে। এ অবস্থায় ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জানা গেছে, ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের এপারে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের তিস্তামুখঘাট ও ওপারে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালু করে। এর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ চালু হয়। উত্তরাঞ্চলের আট জেলার মানুষ ট্রেনযোগে বোনারপাড়া রেল জংশন হয়ে তিস্তামুখ ঘাটে যেত। এরপর সেখান থেকে ফেরিতে পার হয়ে ওপারে বাহাদুরাবাদে গিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকায় যাতায়াত করত। পরে নাব্য সংকটে তিস্তামুখঘাট স্থানান্তর করা হয় একই উপজেলার বালাসীঘাটে। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হয়। ২০০০ সাল থেকে এ রুটে ফেরি চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। অকার্যকর হয়ে পড়ে বালাসীঘাট। রেল ফেরি বন্ধ হওয়ার ২২ বছর পর ২০২২ সালের এপ্রিলে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে চালু হয় লঞ্চ সার্ভিস। বর্ষা মৌসুমে তিন-চার মাস লঞ্চ চললেও শুকনো মৌসুমের শুরুতেই নাব্য সংকটে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর জেগে ওঠে। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ চলাচল। বাধ্য হয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে বাড়তি ভাড়া গুনতে হলেও সময়মতো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না যাত্রীরা। এ নৌ-রুটকে সচল রাখতে দ্রুত ড্রেজিংয়ের দাবি সংশ্লিষ্টদের। ঘোড়াঘাট থেকে আসা বাহাদুরাবাদগামী নৌযাত্রী আলমগীর হেসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে বালাসীঘাট থেকে বাহারাদুরাবাদ নৌকায় যেতে সময় লাগতা দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। শুকনো মৌসুমে সময় লাগছে সাড়ে তিন ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টা। এ ছাড়া মূলঘাটে নৌকা থেকে নেমে যাত্রীদের হেঁটে আসতে হচ্ছে ২ থেকে আড়াই মাইল। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ ঘাট ব্যবহারকারীদের। বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটে নৌকা চালক আফসার আলী বলেন, নদীতে পানি কম থাকায় আমরা সময়মতো ঘাটে পৌঁছাতে পারি না। আমাদের এক ঘণ্টার জায়গায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে। কখনো কখনো চরে নৌকা আটকে যায়। এতে বিপদে পড়তে হয়। লঞ্চমালিক সমিতির সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, নাব্য সংকটে ও নদীপথে ডুবোচরের কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ছোট লঞ্চের জন্য প্রয়োজন ন্যূনতম ৬-৭ ফুট পানি। প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্বের বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটের অন্তত ২০-২৫টি পয়েন্টে নাব্য সংকটে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। নদে শত শত চর-ডুবোচর জেগে উঠেছে। সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্যা চ্যানেল। নদের নাব্য সংকটে বন্ধ প্রায় নৌরুটগুলো। বিআইডব্লিউটিএর বালাসীঘাটে ড্রেজিং কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোতাব্বের হোসাইন বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া আমরা কিছুই বলতে পারব না।

সর্বশেষ খবর