বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ধানে চিটা, দুশ্চিন্তায় কৃষক

বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেও প্রতিকার মিলছে না

সাইফুল মিলন, গাইবান্ধা

ধানে চিটা, দুশ্চিন্তায় কৃষক

শুকিয়ে গেছে আধাপাকা ধান। গাইবান্ধার আমন খেত -বাংলাদেশ প্রতিদিন

খেতে ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু তা শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এসব ধানে থোড় বেরোনোর পর দানা না বেঁধে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খেতের পর খেত। কষ্টের ফসল শেষ পর্যায়ে এসে এভাবে নষ্ট হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। এ পরিস্থিতি গাইবান্ধা সদর উপজেলার কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ফসল বাঁচাতে কীটনাশক ও বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। এ সময় কেন ধানে চিটা হচ্ছে কিছুই জানেন না তারা।  সরেজমিন সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম রাধা কৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই বিলে তিন শতাধিক বিঘা জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। আক্রান্ত খেতে ধান গাছ প্রথমে কালচে রং ধারণ করে, পরে ধূসর ও সাদা হয়ে মরে যাচ্ছে। এক ধরনের ছত্রাকজাতীয় এই রোগ প্রতিরোধে কীটনাশক ও বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না, অভিযোগ অনেক কৃষকের।কৃষকরা বলছেন, ধানের শিষ ঝরে পড়ছে। এবার আবাদে ফলন তারা অর্ধেকও পাবেন না। যেখানে বিঘাপ্রতি ১৬ থেকে ১৮ মণ ফলন হওয়ার কথা, সেখানে ১০ থেকে ১২ মণ ধান পাবেন কি না সন্দেহ তাদের। কৃষকরা বলছেন, এই অভাবি দিনে ধানের ফলন কম হলে বউ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে গাইবান্ধায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয়। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ২৬০ হেক্টর বেশি। এ থেকে চালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫ মেট্রিকটন। জেলার চালের চাহিদা ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬৯০ মেট্রিকটন। চাহিদা মিটিয়ে এবার চাল উদ্বৃত্ত হবে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬০৪ মেট্রিকটন; যা যোগ হবে জেলার অর্থনীতিতে। ওই এলাকার কৃষক ইয়াছিন আলী (৬০) খেতের পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন। তিনি বলেন, অনেক আশা নিয়ে পনে পাঁচ বিঘা জমিতে গুটি স্বর্ণা জাতের ধান লাগিয়েছি। কিছুদিন পরই ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু চিটা হয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে ৪০ শতক জমির ধান একেবারে চিটা হয়ে গেছে। ওষুধ দিয়েও কিছু হয় না। এখন কী করমো বাহে? কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

কৃষক হেলাল মিয়া (৫৫)। তিনি এবার ৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এবার ধানের শিষ বের হওয়ার পর যখন পাকতে শুরু করেছে, দেখছি, ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। আমার এক বিঘা জমির ধান চিটা হয়ে গেছে। ওই এলাকার কৃষক জয়নাল আবেদিন বলেন, এই এলাকায় গুটি স্বর্ণা ধানে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, খেতের বেশির ভাগ ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, এ বছর জেলায় ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। ধানে চিটা এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ ব্যাপারে কিছুই বলা যাচ্ছে না। উপজেলা কৃষি অফিসারকে জানিয়েছি, তিনি যাচ্ছেন ওই খেতগুলো পরিদর্শনে। রিপোর্ট পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কৃষি বিভাগ।

 

 

সর্বশেষ খবর