রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পদ্মায় নাব্য সংকট ডুবোচর

♦ অচল হওয়ার পথে সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌবন্দর ♦ বেকার হয়ে পড়ছেন কয়েক হাজার শ্রমিক

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

পদ্মায় নাব্য সংকট ডুবোচর

নাব্য সংকটে সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌবন্দরে ভিড়তে না পারায় বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে পণ্যবাহী জাহাজ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পদ্মা নদীতে নাব্য সংকট ও বিভিন্ন স্থানে জেগে ওঠা ছোট-বড় অসংখ্য ডুবোচরের কারণে অচল হতে চলেছে ফরিদপুরের একমাত্র সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌ-বন্দরটি। জাহাজ ভিড়তে না পারায় বন্দরে কর্মরত কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। আর চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। মালামাল নিয়ে জাহাজ ভিড়তে না পারায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌ-বন্দরটি এ অঞ্চলের একমাত্র নৌ-বন্দর। পদ্মা সেতু তৈরির আগ পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে বড় বড় জাহাজে সিমেন্ট, সার, কয়লা, ধান, চাল, গম, বালুসহ নানা পণ্য চট্টগ্রাম, মোংলা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আনা-নেওয়া হতো। গত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে ডুবোচর পড়ার কারণে নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গত বছর বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজার দিয়ে ডুবোচর কেটে ক্যানেল তৈরি করে নৌ-চলাচলের ব্যবস্থা করে। এ বছর শুষ্ক মৌসুম শুরু হতেই ফরিদপুরের বিভিন্ন জায়গার ডুবোচর পড়ায় সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌ-বন্দরে বড় কোনো জাহাজই ভিড়তে পারছে না। নৌ-বন্দর থেকে কয়েক কিলোমিটার অদূরে চরভদ্রাসন উপজেলার হাজীগঞ্জ, গোপালপুর, এমপিডাঙ্গী, জাকেরের সূরা এলাকায় পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়তে বাধ্য হচ্ছে। সেখানে দিনের পর দিন পণ্যবাহী জাহাজগুলো থাকায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বড় বড় জাহাজ থেকে ট্রলারে করে নৌ-বন্দরে মালামাল আনার ফলে খরচ বেড়ে যাচ্ছে অনেক। তাছাড়া সেখান থেকে ট্রাকে করে মালামাল আনতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা না থাকায় জাহাজ থেকে মালামাল চুরির ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌ-বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়তে না পারায় তারা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জাহাজগুলো দূরে থাকার কারণে তারা পণ্য খালাস করতে পারছেন না। আর জাহাজ ভাড়াও গুনতে হচ্ছে বেশি। নিরাপত্তা শঙ্কায় এখন আর কোনো জাহাজ চালক এ বন্দরে আসতে চাইছেন না। সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌ-বন্দরে জাহাজ ভিড়তে না পারায় বন্দরে কর্মরত প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক এক প্রকার কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কর্মহীন হওয়ায় এলাকায় চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। এদিকে নৌ-বন্দরে জাহাজ ভিড়তে না পারায় রাজস্ব আয় নেমেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু জানান, ডুবোচরের কারণে নৌ-বন্দরটি এখন অচল হওয়ার পথে। এখন আর জাহাজগুলো ভিড়তে পারছে না। এতে ব্যবসায়ীরা চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন। পাশাপাশি এখানে কর্মরত শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। নৌ-বন্দরটি সচল করতে দ্রুত ডুবোচর কেটে জাহাজ চলাচলের সুযোগ তৈরির দাবি জানান তিনি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পোর্ট অফিসার মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ডুবোচর কাটার জন্য একটি ড্রেজার পাঠানো হয়েছে। আরও একটি ড্রেজার পাঠানো হবে। দ্রুতই ডুবোচর কেটে ক্যানেল তৈরি করে জাহাজ চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া হবে। বন্দরটি সচল রাখতে ও নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে নদী খননের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠানোর কথা জানালেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। জানান, সিঅ্যান্ডবি ঘাট বন্দরটি সচল রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর