সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প

৭০০ পরিবারের মধ্যে টিকে আছে মাত্র ৫০টি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরে মাটির পণ্য তৈরি করছেন শিল্পীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য শত বছরের। বিজয়পুর এলাকার সাতটি গ্রামের পাল সম্প্রদায়ের ৭ শতাধিক পরিবার মাটির হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করতেন। বর্তমানে এ কাজ করছে মাত্র ৫০টি পরিবার। তাও চলছে খুঁড়িয়ে। স্থানীয় সূত্রমতে, সদর দক্ষিণ উপজেলার গাংকুল, তেগুরিয়াপাড়া, দক্ষিণ বিজয়পুর, বারপাড়া, দুর্গাপুর, উত্তর বিজয়পুর ও নোয়াপাড়ার মানুষ মাটির তৈজষপত্র তৈরি করত। ৬০-এর দশকে অ্যালুমিনিয়াম আসায় মাটির পাতিলের চাহিদা কমতে থাকে। মাটি ও কাঠের দাম বাড়ায় বেকায়দায় পড়েন শিল্পীরা। এসব কারণে পারিবারিকভাবে কাজ করা মৃৎশিল্পীরা প্রায় হারিয়ে গেছেন। গাংকুল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের আঙিনায় কাজ করছেন নিবারণ চন্দ্র পাল ও তার স্ত্রী দুঃখীনী চন্দ্র পাল। একজন শব্দ তুলে পাতিলের তলার অংশ লাগাচ্ছেন। আরেকজন কাছে থাকা ডিজাইন পাতিলের গায়ে চাপ দিচ্ছেন। তারা এখানে তৈরি করছেন মুড়ি ভাজার ঝাঁজুর, তাওয়া, পিঠার খোলা, মাংস রান্নার হাঁড়ি। নিবারণ চন্দ্র পাল বলেন, তিনি ৬০ বছর ধরে কাজ করেন। ২০ বছর আগেও গ্রামের বাড়ি বাড়ি উৎসব লেগে থাকত। পাইকাররা আসতেন দূর থেকে। পাইকারের চাহিদা মেটাতে কাজ করতে করতে দম ফেলার সুযোগ থাকত না। অ্যালুমিনিয়াম, মেলামাইন আর প্লাস্টিক নষ্ট করেছে মাটির ব্যবসা। মাটি ও কাঠের দাম বাড়ায় বেকায়দায় পড়েছেন শিল্পীরা। ২০ বছর আগে এক ট্রাক মাটির দাম ছিল ৩০০ টাকা। এখন তা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। দুঃখীনী চন্দ্র বলেন, পরিবারের (স্বামী) পায়ের সমস্যা, তাই মৃৎশিল্পের কারখানায় কাজ করতে পারেন না। মাটির কাজ করে দুই মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে এমএ পাস করেছে। একটা চাকরি পেলে তার ভালো হতো। আরেক ছেলে কলেজে পড়ছে। পাতিল পোড়ানোর ব্যবস্থা (পইনঘর) আধুনিক করা গেলে তাদের কাজের সুবিধা হতো। বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি তাপস কুমার পাল বলেন, সাত গ্রামে পাল সম্প্রদায়ের বাস। গ্রামগুলোতে হারিয়ে গেছে উৎসব। মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। তাই পরিবারের অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। মৃৎশিল্পীদের জন্য পল্লী করা গেলে এই পেশাজীবীরা টিকে থাকতে পারতেন। কুমিল্লা বিসিকের ডিজিএম মুনতাসির মামুন বলেন, বিজয়পুর মৃৎশিল্প কুমিল্লার ঐতিহ্য। শিল্পীদের সমস্যা খোঁজ নিয়ে দেখব। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টিও ভেবে দেখা হবে।

সর্বশেষ খবর