মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঝিনাইদহে বেড়েছে কিশোর অপরাধ

একের পর এক ঘটছে ধর্ষণ খুন চুরি ছিনতাই

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহে বেড়েছে কিশোর অপরাধ

ঝিনাইদহে কিশোর অপরাধ ক্রমেই আতঙ্ক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যা সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা অপরাধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। যদিও এটি একটি সামাজিক সমস্যা। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এ অপরাধ। এ কারণে একের পর এক ঘটছে ধর্ষণ, খুন, চুরি, ছিনতাই। অভিযোগ রয়েছে, এসব কিশোর অপরাধীর নেপথ্যে থেকে মদদ দিচ্ছে রাজনৈতিক দলের কিছু উচ্চাভিলাষী নেতা। তারা কিশোরদের ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে ব্যস্ত। সমাজে তারা অবস্থান শক্তিশালী করতে এসব কিশোর বা তরুণকে নানা অনৈতিক কাজে ব্যবহার করছেন। আরও অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে কিশোর অপরাধীদের তৎপরতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছেন ওই সব রাজনৈতিক নেতা। সচেতন নাগরিকদের ধারণা, স্কুল-কলেজগামী কিশোররা দামি মোবাইল ও প্রযুক্তির অপব্যবহারে জড়িয়ে পড়ছে খুন ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধে। তাছাড়া বিপথগামী কিশোররা নেশার টাকা জোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছে চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্মে।

জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে শৈলকূপার ভাটইবাজার এলাকায় টিকটকের ভিডিও করা নিয়ে দুই কিশোরের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। ওই ঘটনায় বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। এর আগে জুলাইয়ে সদর উপজেলার আড়ুয়াকান্দি এলাকায় মোবাইল চুরি নিয়ে সাকিব নামে এক কিশোরকে গলা কেটে হত্যা করে তারই বন্ধু মনির মোল্লা। গত কয়েক মাসে জেলার কয়েক জায়গায় কিশোর অপরাধীদের হামলায় আহত হয়েছে অনেকে। এ ছাড়া সন্ধ্যার পরই এক শ্রেণির কিশোর বিভিন্ন সড়কে পথচারীদের মোবাইলসহ বিভিন্ন সামগ্রী ছিনতাই করছে। এসব কারণে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, এ অপরাধে জড়িত কিশোরদের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। ঝিনাইদহ জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সভাপতি অমিনুর রহমান টুকু জানান, বিভিন্ন মিডিয়ায় বড় বড় শহরের কিশোর গ্যাংয়ের খবরও উৎসাহিত করছে কিশোরদের। জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে তাদের সরব উপস্থিতি উদ্বেগের বিষয়। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে কিশোরদের গ্যাং কালচার বা সংঘবদ্ধ অপরাধের ভয়ংকর চিত্র সামনে এলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে কিশোর অপরাধের প্রবণতা কমানো যায়নি, বরং বেড়েছে। সম্প্রতি টিকটক, লাইকির মতো ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহারে ঝুঁকে পড়ছে কিশোর-তরুণরা। এ ক্ষেত্রেও তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন গ্রুপ।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান জানান, নৈতিক শিক্ষার অভাব, মোবাইলে প্রযুক্তির অপব্যবহার স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অভিভাবকদের অসচেতনতায় তারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে, আসক্ত হচ্ছে নেশায়। পরিবার ও সমাজের ইতিবাচক পদক্ষেপ ছাড়া কিশোর অপরাধ রোধ সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর