শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সমৃদ্ধির পথ দেখাচ্ছে ব্রি ধান-৬

অল্প খরচে মিলছে অধিক ফলন

আমিনুল হাসান শাহীন, গোপালগঞ্জ

সমৃদ্ধির পথ দেখাচ্ছে ব্রি ধান-৬

গোপালগঞ্জে ব্রি হাইব্রিড ধান-৬ এর প্রদর্শনী মাঠ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গোপালগঞ্জে ব্রি হাইব্রিড ধান-৬ খেতে রোগ, বালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়নি। স্বল্প জীবনকালের এ ধান স্থানীয় বিঘায় (৫২ শতাংশ) ৩৩ মণ ফলন দিয়েছে। অল্প খরচে অধিক ফসল গোলায় তুলেছেন কৃষকরা। আগামীতে এ ধান আরও বেশি আবাদে তারা আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কৃষকদের সমৃদ্ধির এমন পথ দেখাচ্ছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবন করা এ ধান। আমন মৌসুমে দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কৃষকের মধ্যে এ জাতের ধান চাষাবাদ সম্প্রসারণ করতে চাইছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুকতাইল ইউনিয়নের কৃষক মো. লায়েব সিকদার বলেন, প্রতি বছর আমন মৌসুমে স্থানীয় জাতের ধান চাষ করতাম। বিঘাপ্রতি ১৫ মণ ধান উৎপাদন হতো। কিন্তু এ বছর ব্রি হাইব্রিড ধান-৬ জাতের ধান চাষ করেছি। এতে প্রতি বিঘায় ৩৩ মণ ধান পেয়েছি। অধিক ধান ঘরে তুলেছি। একই গ্রামের কৃষক লিটু শেখ বলেন, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে চার কেজি ব্রি হাইব্রিড ধান-৬ ও প্রয়োজনীয় সার বিনামূল্যে পাই। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে এ ধান আমি এক বিঘা জমিতে রোপণ করি। রোপণের ১১৫ দিনের মধ্যে ধান কেটেছি। খেতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়নি। তাই সার-কীটনাশক খরচ সাশ্রয় হয়েছে। সেচ খরচ তেমন হয়নি। এতে কম খরচে অধিক ধান উৎপাদন হয়েছে।

প্রবীণ কৃষক ছাবেদ আলী বলেন, আমার জীবনে আমন মৌসুমে আগে খেতে এত ধান উৎপাদন হতে দেখিনি। খেতের ধান দেখে আমি আনন্দে মাতোয়ারা। আগামীতেও আমি এ ধান চাষ করতে চাই। এ ব্যাপারে আমি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতা চাইছি।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও সিনিয়র সাইস্টিফিক অফিসার ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ব্রি হাইব্রিড ধান-৬ একটি আধুনিক, রোগ সহিষ্ণু, স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন, উচ্চ ফলনশীল ও চিকন ধানের জাত। এটি ভালো পরিচর্যা পেলে হেক্টরে ৬ থেকে ৬.৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। গোপালগঞ্জে এ ধান বিঘায় ৩৩ মণ ফেলেছে। সে হিসাবে এ জেলায় হেক্টর প্রতি এ ধান ৬.২ টন ফলেছে। এ ধানের চাষাবাদ সম্প্রসারণ করতে পারলে দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তাই কৃষকের বীজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৃজন চন্দ্র দাস বলেন, আমরা গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও বাগেরহাট জেলায় এ ধানের জাত পরিচিতি, সম্প্রসারণ ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছি। আমন মৌসুমে আমরা ৩ জেলায় ১ হাজার ৪০০ কেজি ধানের বীজ বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেছি। তারা এ ধান দিয়ে ৭০০ বিঘা জমি চাষাবাদ করেছেন। এ ধান চাষে বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষকরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপপরিচালক আ. কাদের সরদার বলেন, এ ধান আমন মৌসুমের হাইব্রিড ধানের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ফলন হয়েছে। আমরা এ জাত ছড়িয়ে দিতে আন্তরিকভাবে কাজ করব। এতে দেশে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। এ ধান কাটার পর কৃষক রবি ফসল করতে পারবেন। কৃষিকে লাভজনক করতে এ ধান ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

সর্বশেষ খবর