শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অকার্যকর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প

খাল দখল করে মাছ চাষ, বিপাকে চাষিরা

পাবনা প্রতিনিধি

অকার্যকর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প

খালে বাঁধ দেওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে পানি প্রবাহ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রায় হাজার কোটি টাকার পাবনা সেচ উন্নয়ন প্রকল্প অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর প্রধান ক্যানেল কচুরিপানায় আচ্ছাদিত। এ ছাড়া সংযোগ খালগুলো দখল করে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। এতে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে ব্যাহত হচ্ছে শত শত হেক্টর জমির চাষাবাদ। এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী। সরেজমিন দেখা যায়, সাঁথিয়ার তলট গ্রামে পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান সেচ খাল কচুরিপানায় ঢাকা একটি জলাশয়ে রূপ নিয়েছে। পরিষ্কার না করায় প্রায় ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালটির অধিকাংশই প্রায় ভরাট হয়ে এমন দুরবস্থা হয়েছে। এ ছাড়া বেড়া উপজেলার পেঁচাকোলা, হরিরামপুর, বায়া, পানশাইলসহ অনেক এলাকায় সেচ ক্যানেল মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কোথাও কোথাও ক্যানেল ভরাট করে দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। সূত্র জানায়, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলার প্রায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৪ হেক্টর কৃষি জমি সেচের আওতায় আনতে ১৯৯২ সালে ৩৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চালু হয় পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প। বেড়া উপজেলার বৃশালিখায় হুরাসাগর নদী ও কৈটোলায় যমুনা নদীর পাড়ে পানি উত্তোলন ও নিষ্কাশনে নির্মাণ করা হয় দুটি পাম্পস্টেশন। নির্মাণ করা হয় ছোট-বড় সেচ খাল, নিষ্কাশন খাল, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, স্লুইসগেট, কালভার্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পে পাম্প হাউসের মাধ্যমে হুরাসাগর নদী থেকে প্রধান সেচ খালের মাধ্যমে পানি যাওয়ার কথা ১৯টি সেকেন্ডিয়ারি খালে, যার আটটি পুরোপুরি বন্ধ। ৪৭টি টারশিয়ারি খালের ৩০টিই অকেজো। ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে শুরুতে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার কথা। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় ৩০ বছরে অতিরিক্ত ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন মাত্র ৭০০ হেক্টর জমিতে সেচ দিতে পারছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ প্রকল্প। কৃষকদের অভিযোগ, প্রকল্পের সেচ ক্যানেলগুলো দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এতে তারা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ক্যানেল সংস্কারের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা থেকে বরাদ্দ থাকলেও নেওয়া হচ্ছে না তেমন কোনো উদ্যোগই। প্রধান খালের সঙ্গে সংযুক্ত সেকেন্ডারি সেচ খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালীরা। বেড় জাল, সুতি জালসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় পানির প্রবাহ পথ বন্ধ। জলাবদ্ধতায় রবিশস্য আবাদ করতে পারছেন তা কৃষকরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা, কমছে ফসল উৎপাদন।

বেড়ার পেঁচাকোলা গ্রামের কৃষক আবদুল হালিম জানান, সেচ ক্যানেল ভেঙে মিশে গেছে। এগুলো ঠিক করার নাকি টাকা আসে। তবুও এগুলো ঠিক করা হয় না। প্রভাবশালীরা খালে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে মাছ চাষ করে। অথচ সেচের জন্য পানি থাকে না।  পানি ব্যবহারকারী সমিতির সভাপতি আনছার আলী জানান, এখান থেকে অল্প খরচে কৃষকরা জমিতে সেচ দিতে পারলে উৎপাদন ব্যয় অনেক কমে যায়। এ সেচ সুবিধা প্রাপ্ত কৃষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা আরও কমেছে। পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, ক্যানেলগুলো পরিচর্যায় যে বরাদ্দ আসে, সে অনুযায়ী সংস্কার করা হয়ে থাকে। এ সংস্কার পর্যাপ্ত নয়। একটি প্রকল্প আমরা হাতে পাচ্ছি, সেটি বাস্তবায়ন হলে আশানুরূপ সেচ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেব।

সর্বশেষ খবর