সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

লাখো মানুষের জীবিকার চাকা থমকে আছে

তিন বছর বন্ধ রংপুর চিনিকল

সাইফুল মিলন, গাইবান্ধা

লাখো মানুষের জীবিকার চাকা থমকে আছে

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে অবস্থিত রংপুর চিনিকল জেলার একমাত্র কৃষিভিত্তিক ভারী শিল্পকারখানা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থা নিয়ন্ত্রণাধীন যে ছয়টি চিনিকলে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম এই চিনিকল। লোকসান কমাতে ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার কথা বলে তখন এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ২০২০-২১ বার্ষিক আখ মাড়াই মৌসুম শুরুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও সর্বোচ্চ মাড়াইক্ষমতা ও বিপুল পরিমাণ জমিতে আখ রেখে শেষ মুহূর্তে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিক্ষুব্ধ আখচাষি ও শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করেন। তখন আন্দোলনরতদের উদ্দেশে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, আধুনিকায়নের মাধ্যমে খুব দ্রুতই আবার চালু করা হবে রংপুর চিনিকলসহ সবকটি। আজও চিনিকলটি চালু না হওয়ায় প্রায় ১ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা, ৫০ হাজার চাষি ছাড়াও বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা অর্জনের মাধ্যম থমকে আছে। এ চিনিকলের স্থায়ী চাকরিজীবীদের একাংশ, গাড়ি, যন্ত্রাংশ ও নানা প্রয়োজনীয় মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অন্য চিনিকলে। কাজ হারানো ‘কাজ নাই, মজুরি নাই’ চুক্তিভিত্তিক অর্ধসহস্রাধিক শ্রমিক এখন পেটের দায়ে ভ্যান-রিকশা চালানোসহ বিভিন্ন কাজ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিন বছর বন্ধ থাকায় ৩৫ একর আয়তনের কারখানার চত্বর ভরে গেছে জঙ্গলে। খোলা আকাশের নিচে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা আখ পরিবহনের যানবাহনগুলোও ধ্বংসের পথে। কারখানার ভিতরের দৃশ্যও একই রকম। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতিতে ধরেছে মরিচা। মিলস গেট সাবজোনের আখচাষি ফেরদৌস আলম বলেন, রংপুর চিনিকলের চাইতে অনেক কম মাড়াই ক্ষমতাসম্পন্ন জয়পুরহাট চিনিকলের আখ জোন এলাকায় উৎপাদন হয় কয়েক গুণ কম। তারপরও ওই মিলটি চালু রেখে ৯০-১০০ কিলোমিটার দূরের রংপুর চিনিকলের এবং ১৫০-২০০ কিলোমিটার দূরের শ্যামপুর চিনিকলের আখ জয়পুরহাটে পরিবহন করতে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। জয়পুরহাট ও শ্যামপুরের মধ্যবর্তী স্থানের রংপুর চিনিকল চালু রাখলে সরকারকে এ অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হতো না। রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফারুক হোসেন ফটু জানান, চিনিকলটি বন্ধ থাকায় এ জনপদের সব স্তরে অন্ধকার নেমে এসেছে। কৃষক ও শ্রমিকবান্ধব বর্তমান সরকার চিনিকলটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে পুনরায় চালু করার পদক্ষেপ নেবে- আমরা বিশ্বাস করি। রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইনচার্জ) মাসুমা আকতার জাহান বলেন, চালু অবস্থায় এ চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য বেতনভাতা বাবদ মাসে প্রায় ১ কোটি টাকা প্রয়োজন হতো। সরকারি সিদ্ধান্তে মাড়াই বন্ধ হওয়া এ চিনিকলের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রক্ষায় বর্তমানে সাতজন স্থায়ী কর্মকর্তা ও ৭৫ জন অস্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারী রাখা হয়েছে। ১৯৫৪ সালে তৎকালীন রংপুর জেলার গাইবান্ধা মহুকুমার গোবিন্দগঞ্জে শুরু হয় রংপুর চিনিকলের নির্মাণ কাজ। তিন বছর পর নির্মাণ সম্পন্ন হয়। ১৯৫৭-৫৮ মৌসুম থেকে আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে চিনি উৎপাদন শুরু হয় মিলটিতে।

সর্বশেষ খবর